হৃদয় হোসেনঃ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের প্রভাষকগণের পদোন্নতি বৈষম্য ও দীর্ঘ একযুগের বঞ্চনার প্রতিবাদে পাবনায় টানা কর্মসূচি পালন করছেন বিভিন্ন সরকারি কলেজের শিক্ষকরা। জেলার
সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ, শহীদ বুলবুল সরকারি কলেজ, পাবনা সরকারি মহিলা কলেজ, ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের শিক্ষকেরা একত্র হয়ে মানববন্ধন, অবস্থান ধর্মঘট, প্রতিবাদ সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।
একযুগ ধরে একই পদে—শিক্ষকদের ক্ষোভ চরমে
শিক্ষকরা জানান, প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর ধরে একই পদে থেকে কোনোরূপ পদোন্নতি না পাওয়া তাদের ক্যারিয়ার ও আর্থিক অবস্থায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। সরকার ঘোষিত পদোন্নতির নীতিমালা থাকা সত্ত্বেও কাঙ্ক্ষিত পদ সৃষ্টি না হওয়া এবং প্রশাসনিক জটিলতার কারণে প্রভাষক পদে আটকে রয়েছেন হাজারো শিক্ষক।
অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“একদিকে বাড়তি ক্লাস-লেকচার, প্রশাসনিক চাপ—অন্যদিকে বছরের পর বছর একই গ্রেডে আটকে থাকা—এটি এক ধরনের মানসিক নির্যাতনের মতো।”
শিক্ষকদের দাবি
প্রভাষকরা তাদের আন্দোলনে কয়েকটি মূল দাবি তুলে ধরেছেনঃ
দ্রুততম সময়ে পদোন্নতিযোগ্য সকল প্রভাষকের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিয়ে জিও জারি করতে হবে
শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারীকৃত ২০০০ বিধির কলেজসমূহের জাতীয়করণের তারিখ হতে ক্যাডারভুক্তির নিয়মিতকরণের অবৈধ প্রজ্ঞাপনসমূহ বাতিল করতে হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক মামলা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
তারা বলেন, দেশে প্রায় সব ক্যাডারেই সময়ে সময়ে পদোন্নতি দেওয়া হলেও শিক্ষা ক্যাডারের প্রভাষকরা দীর্ঘদিন ধরে চরম বৈষম্যের শিকার।
পাবনায় কর্মসূচির চিত্র
পাবনা জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে প্রভাষকরা ব্যানার-ফেস্টুন হাতে অবস্থান নেন। সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে অবস্থান কর্মসূচি। পরে মানববন্ধন শেষে তারা প্রতিবাদ সমাবেশ করে।
সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন,
“শিক্ষক সমাজের প্রতি এমন অবহেলা শিক্ষাখাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আমরা পাঠদানে নিষ্ঠাবান, কিন্তু ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে মনোবল ধরে রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।”
শিক্ষার্থীদের শিক্ষার ওপর আংশিক প্রভাব
অব্যাহত কর্মসূচির কারণে কিছু কলেজে স্বাভাবিক ক্লাস কার্যক্রম আংশিক ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে শিক্ষকরা নিশ্চিত করেছেন, শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিবেচনায় তাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ এবং সীমিত আকারে পরিচালিত হচ্ছে।
সরকারের প্রতি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান
শিক্ষকরা আশা করছেন—সরকার দ্রুত তাদের দাবি বাস্তবায়ন করবে।
তারা জানান, সমাধান না হলে আন্দোলন আরও কঠোর হতে পারে, তবে শিক্ষকদের লক্ষ্য কখনোই শিক্ষাব্যবস্থা অচল করা নয়; বরং ন্যায্য প্রাপ্যটুকু অর্জন করা।