যেসব খাবার ধীর করবে চল্লিশের পরে বার্ধক্যের ধারা

শেয়ার করুন

বয়সের ছাপ ধীর করতে পারে কয়েকটি খাবার।

বয়সের সঙ্গে চেহারায় যেমন পরিবর্তন আসে। তেমনি দেহের ভেতরেও পরিবর্তন হয়। আর বার্ধক্য যত এগিয়ে আসে রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে।

তবে কিছু ‘সুপারফুড’ রয়েছে যেগুলো নিয়মিত খাওয়ার মাধ্যমে বার্ধক্যের প্রক্রিয়া ধীর করা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক জানাচ্ছে, ঠিক কোন কোন বৈশিষ্ট্য থাকলে খাবারগুলোকে সুপারফুড বলা হবে তা নির্দিষ্ট করা নেই। তবে সাধারণভাবে যেসব খাবারে ক্যালরি কম ও বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে ভরপুর সেগুলোকে সুপারফুড বলা যেতে পারে।

এই বিষয়ে নিউ ইয়র্ক’য়ের পুষ্টিবিদ লরেন মানাকার বলেন, “বয়সের সঙ্গে কিছু পুষ্টির চাহিদা পরিবর্তিত হয়। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু ‘সুপারফুড’ গ্রহণ করার মাধ্যমে বয়স বাড়লেও সুস্থ জীবনযাপান করা সম্ভব হয়।”

ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ‘ফুয়েলিং মেল ফার্টিলিটি’ বইয়ের এই লেখক আরও বলেন, “স্বাস্থ্যকর অভ্যাস রপ্ত করার জন্য চল্লিশ বয়সটা উৎকৃষ্ট সময়। তাছাড়া এই বয়স থেকেই শরীরে নানান পরিবর্তন শুরু হয়। এরমধ্যে রয়েছে পেশির ক্ষয়, হরমোনের পরিবর্তন, হাড়ের দুর্বলতা, নারীদের ক্ষেত্রে ‘মেনোপজ’ ইত্যাদি।”

তাই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সুস্থ থাকতে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়াই শ্রেয়।

পেস্তা বাদাম

“ফ্রি র‌্যাডিক্যাল্স’ দেহের কোষ পর্যায়ে আক্রমণ করে, যা থেকে হয় অক্সিডেটিভ স্ট্রেস”, বলেন মানাকার।

তিনি আরও জানান, এর ফলে কোষ পর্যায়ে বার্ধক্যের গতি বৃদ্ধি পায়। দেখা দেয় নানান দীর্ঘমেয়াদি রোগ। এর মধ্যে হৃদরোগ ও ক্যান্সার উল্লেখযোগ্য। আর ‘অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট’ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার মাধ্যমে এই কোষ পর্যায়ে ক্ষতির মাত্রা কমানো যায়।

মানাকার এই ক্ষেত্রে পেস্তা বাদামের কথা উল্লেখ করেন।

নিউ ইয়র্ক’য়ের ‘কর্নেলি ইউনিভার্সিটি’র করা ‘নিউট্রিয়েন্টস’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে এই পুষ্টিবিদ জানান, পেস্তা বাদামে উচ্চ মাত্রায় ‘অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট’ রয়েছে। যা কিনা আরও দুটি সুপারফুড হিসেবে খ্যাত ব্লুবেরি ও ডালিমের মতোই উপকারী।

মানাকার বলেন, “গবেষণার তথ্য উপাত্ত থেকে বলা যায়, প্রতিদিন একমুঠ পেস্তা বাদাম খেতে পারলে কোষ পর্যায়ে বার্ধক্যের প্রক্রিয়া যেমন ধীর হয়, তেমনি দীর্ঘমেয়াদে ‘প্রি ডায়াবেটিস’ থেকেও রক্ষা করতে পারে।”

পাশাপাশি এই বাদামে রয়েছে লুটেইন। এই ক্যারোটিনয়েড অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

স্যামন

‘সুপারফুড’য়ের তালিকার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের তেলযুক্ত মাছ রয়েছে। এরমধ্যে স্যামন মাছও আছে।

নিউ ইয়র্ক’য়ের আরেক পুষ্টিবিদ লিসা ইয়ং বলেন, “চর্বিহীন প্রোটিনের দারুণ উৎস হল স্যামন। পেশির ক্ষয় প্রতিরোধ করতে চর্বিহীন প্রোটিন জরুরি। বিশেষ করে যারা বয়স্ক।”

এছাড়াও উচ্চা মাত্রায় ‘ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস’ সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে হৃদরোগের ঝুঁকিও কমাতে পারে এই মাছ।

ক্র্যানবেরিজ

ক্র্যানবেরি ফল ও এই ফলের রস বার্ধক্যের ছাপ ধীর করতে পারে।

যুক্তরাজ্যের নরিচ বিশ্ববিদ্যালয়ের করা গবেষণার ফলাফল থেকে পুষ্টিবিদ মানাকার জানান, ক্র্যানবেরিজে থাকা উদ্ভিজ্জ উপাদান বার্ধক্যের প্রক্রিয়াকে ধীর করতে পারে। বিশেষ করে জ্ঞানীয় ক্ষমতার ক্ষেত্রে।

তিনি বলেন, “গবেষণা অনুযায়ী ছোট এক কাপ পরিমাণ ক্র্যানবেরিজ তিন মাস ধরে প্রতিদিন খাওয়ার ফলে অংশগ্রহণকারীদের স্মরণশক্তির উন্নতি হতে দেখা গেছে।”

এই টক ফলে আরও রয়েছে ভিটামিন সি। এই পুষ্টি উপাদান ‘ফ্রি র‌্যাডিকেল’য়ের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। ফলাফল- ত্বকে বয়স্ক হওয়ার ছাপ পড়ার গতি ধীর হয়।

টমেটো

পুষ্টিবিদ ইয়ং বলেন, “লাল খাবার, যেমন টেমেটোতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ‘লাইকোপেন’, যা ফ্রি র‌্যাডিকেলের বিরুদ্ধে কাজ করে। যে কারণে বার্ধক্যের ছাপ ধীর হয়।”

এই উদ্ভিজ্জ উপাদান তরমুজ থেকেও মিলবে।

উচ্চ মাত্রায় লাইকোপেন সমৃদ্ধ খাবার কোলেস্টরলের মাত্রা কমাতে ও হৃদসংক্রান্ত স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারে। ফলে হৃদরোগ ও স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা কমে। এমনকি পুরুষের প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমায়।

পাশাপাশি বার্ধক্যজনিত রোগ থেকেও রক্ষা করতে পারে।

স্ট্রবেরিজ

“ভিটামিন সি ও উপকারী উদ্ভিজ্জ উপাদানে ভরপুর এই ফল”, বলেন মানাকার।

‘জার্নাল অফ আলৎঝাইমার’স ডিজিজ’য়ে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টার’য়ের গবেষণা অনুযায়ী, পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি বার্ধক্যজনিত মস্তিষ্কের ক্ষয় রোধ করতে পারে।

তাছাড়া সম্পূরক হিসেবে ভিটামিন সি খাওয়ার চাইতে খাবারের মাধ্যমে এই ভিটামিন গ্রহণ করতে পারলে উপকার বেশি পাওয়া যায়।

মানাকার বলেন, “গবেষণায় দেখা গেছে সপ্তাহে দুদিনের বেশি বেরি ধরনের ফল খেতে পারলে মস্তিষ্কের বয়স্ক হওয়ার গতি কমে।”

ইয়ং বলেন, “ফ্রি র‌্যাডিকেল’য়ের ক্ষতির হাত থেকে কোষকে রক্ষা করতে পারে বেরি ধরনের ফল। যা কিনা হৃদরোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।”

সবুজ পত্রল সবজি

“এই ধরনের সবজি যেমন- পাতাকপি ও পালংশাকে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন ই এবং কে। যা স্মরণশক্তি লোপ পাওয়ার হাত থেকে বাঁচায় ও মস্তিষ্কের বয়স্ক হওয়া ধীর করে”, বলেন ইয়ং।

এছাড়াও এই ধরনের সবুজ সবজিতে রয়েছে ক্যারোটিনয়েডস, যা অক্সিডেটিভ ক্ষতির হাত থেকে চোখ বাঁচায়। বিশেষ করে পালংশাকে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ এবং সি। এসব উপাদান হৃদযন্ত্রকেও রক্ষা করে।

(Visited 141 times, 1 visits today)

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *