টুপি বুনে বছরে আয় কোটি টাকা!

শেয়ার করুন

আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে বগুড়ার টুপি পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা বেড়েছে। প্রত্যক্ষ আর পরোক্ষভাবে এ শিল্পে যুক্ত অন্তত সাড়ে তিন লাখ নারী। প্রতি রমজানে প্রায় এক কোটি পিস টুপি উৎপাদন করেন তারা; ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকার বিক্রি হয় দেশ আর দেশের বাইরে। এ টুপিগুলো সৌদিআরব, দুবাই, কাতার ছাড়াও পাকিস্তান, ভারত, মালয়েশিয়ায় রপ্তানি হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শেরপুর আর ধুনটের নারীরা অগ্রগামী হলেও সদর, শিবগঞ্জসহ বিভিন্ন গ্রামে এমন টুপি পল্লি গড়ে ওঠেছে। গেলো এক দশকে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠেছে এই টুপি পল্লি। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন শহর থেকে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি এসে গ্রামে গ্রামে ঘুরে নগদ টাকায় সংগ্রহ করেন টুপিগুলো। প্রতিটির দাম ৩০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। রমজানে টুপির চাহিদা বেশি থাকায় এখন থেকেই চাপ বেড়েছে কারখানাগুলোতে। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনাময় এ খাতে সরকারি প্রণোদনা বাড়ানোর আশ্বাস বিসিক কর্তৃপক্ষের।

সরেজমিন বগুড়া শিবগঞ্জ উপজেলার কাজিপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠোনগুলোতে পড়ন্ত দুপুর থেকে জমে আড্ডা। তবে কেবল গল্প নয়, গ্রামের নারীরা এ সময় একসঙ্গে বসে তৈরি করেন জালি টুপি। সংসারের কাজের পাশাপাশি জালি টুপি বুনে হয়ে ওঠছেন স্বাবলম্বী। কেউ দিনে একটি কেউবা চালু হাতে ক্রুশ কাটায় বুনে ফেলেন তিনটি টুপি।
এদিকে ঘরে বসে গ্রামীণ নারীদের অর্থ উপার্জনের নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে এ জালি টুপি। এতে করে সন্তানদের ছোটখাটো আবদার রক্ষার পাশাপাশি পরিবারকেও সহযোগিতা করতে পারছেন গ্রামীণ নারীরা। দোকানে বাজার সদাইয়ের জন্য বাড়ির কর্তার জন্য অপেক্ষা করে থাকতে হয় না।

কাজিপাড়া গ্রামের টুপি শিল্পী লাভলি বেগম বলেন, ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছি এ টাকা দিয়ে। এছাড়াও টুপি বিক্রির টাকা টুকিটাকি অনেক কাজে লাগে।

গ্রামের কলেজছাত্রী রেহানা আক্তার বলেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি অবসর সময়ে টুপি সেলাই করি। এতে হাতখরচের টাকা ওঠে। কলেজে যাওয়া-আসার ভাড়ার জন্য বাড়ির কারও কাছে টাকা চাইতে হচ্ছে না।
বাংলাদেশ জালি টুপি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জুয়েল আখন্দ বলেন, সারা বছরই টুপি তৈরির কাজ করেন কারিগররা। তবে রমজানের আগে কাজের চাপ বেশি। এ টুপিগুলো সৌদিআরব, দুবাই, কাতার ছাড়াও পাকিস্তান, ভারত, মালয়েশিয়ায় রপ্তানি হচ্ছে।

এদিকে বগুড়ার টুপিশিল্পের পণ্যগুলোর গুণগত মান ভালো হওয়ায় এ খাতকে সম্ভাবনাময় হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন। দেয়া হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ।

এ ব্যাপারে বিসিকের জেলা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপমহাব্যবস্থাপক এ.কে.এম. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘বগুড়ায় লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের মতো এটিও একটি সম্ভাবনাময় খাত। আমরা উদ্যোক্তাদের এরইমধ্যে ঋণ সহায়তা দিয়েছি। তবে আরও চাহিদা আছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে প্রান্তিক পর্যায়ে আরও ঋণ সহায়তা দেয়া হবে।

(Visited 4 times, 1 visits today)

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *