পাবনায় রহস্যজনক ভাবে গড়ে উঠছে কিশোরী গ্যাং, জড়াচ্ছে বিভিন্ন অপরাধে

শেয়ার করুন

তারেক খান: সূর্য ডুবে গেলে যেন অন্য এক পাবনার জন্ম হয়। আলো ঝলমলে শহরের অলিগলি তখন ভরে ওঠে নতুন এক গোষ্ঠীর পদচারণায়—কিশোরী গ্যাং।

দল বেঁধে থাকে তারা, হাতে সিগারেট, কানে গান বাজে তীব্র বিটে, চোখে স্মার্টফোনের নিয়ন আলো। ১৪ থেকে ২২ বছরের মেয়েরা এসব গ্যাংয়ের সদস্য। মাদক, হানিট্র্যাপ, সহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা।

একসময় তারা শুধু আড্ডা দিত। নেটওয়ার্ক বাড়তে বাড়তে সঙ্গ দোষে শুরু হয়েছে গ্যাং তৈরির আইডিয়া। সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ, মুক্তমঞ্চ, টেবুনিয়া কৃষি ফার্ম, পাবনা রেলওয়ে স্টেশন, ঈশ্বরদী গ্রীণ সিটি, পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, লালন সেতু সহ বিভিন্ন হোটেলে এদের দৌরাত্ম্য। এদের কাজে কেউ বিরক্ত করলে শুনতে হয় অশালীন ভাষায় গালাগাল। কেউ প্রতিবাদ করলে জড়িয়ে পড়ে মারামারি। পর্দার আড়ালে থাকে তাদের সহযোগী কিশোর গ্যাং, যারা ঝামেলা লাগলেই ছুটে আসে। ছুরি, লাঠি, হাতাহাতি, খুন সবই ঘটে মুহূর্তের মধ্যে।

স্থানীয়রা বলেন, সন্ধ্যার পর এলাকাগুলোয় এখন আর আগের মতো নিরাপদ নয়। মেয়েরা এখন নিজেরাই গ্যাং চালায়, আর তাদের পেছনে থাকে ছেলেরা।

এক অভিভাবক ক্ষোভে বলেন, বাসা থেকেই স্কুল বা প্রাইভেটের নাম করে বেরিয়ে সারাদিন বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডা মেরে বেড়ায়। স্কুলে ঠিকমতো যায় না, সারাদিন ফোনে টিকটক করে। রাত হলেই বাইরে চলে যায়। আমরা কিছু বললেই বাড়ি থেকে চলে গিয়ে বন্ধুবান্ধবের বাড়ি গিয়ে ওঠে।

পুলিশ বলছে, কিশোর ও কিশোরীদের অপরাধপ্রবণতা এখন সামাজিক সংকটে পরিণত হচ্ছে। এই প্রবণতা ঠেকাতে আমরা কাজ করছি, তবে পরিবার যদি সচেতন না হয়, শুধু আইন দিয়ে এটা থামানো যাবে না।

সামাজিক বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলছেন, এটা কেবল কিশোর অপরাধ নয়—এটা এক ধরনের নতুন সংস্কৃতি, যেখানে অল্প বয়সে জনপ্রিয় হওয়ার নেশা তাদের ঠেলে দিচ্ছে অন্ধকারে। সোশ্যাল মিডিয়ার লাইভ ভিডিও, গ্যাং সেলফি আর ফলোয়ার বাড়ানোর লড়াই এখন তাদের নেশা। এটা সামাজিক অবক্ষয়।

কেউ কেউ বলছে, পাবনা শহরে এখন এক অদৃশ্য ভয় কাজ করছে— দিনের আলোয় যেখানে হাসি, সন্ধ্যা নামলেই সেখানে ছড়িয়ে পড়ে ভয়।

(Visited 244 times, 1 visits today)

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *