পাবনায় ১৮৪ বছরের ঐতিহ্যবাহী মসজিদ মৌলানা মোহাম্মদ আলী জামে মসজিদ

শেয়ার করুন

তারেক খান : পাবনা শহরের রাধানগর পাওয়ার হাউজ মহল্লায় ঐতিহ্যবাহী ‘মৌলানা মোহাম্মদ আলী জামে মসজিদটি’ অবস্থিত। বর্তমানে মসজিদটির বয়স প্রায় ১৮৪ বছর। মসজিদটি কোনো ঐতিহাসিক মসজিদ নয়। তবে মসজিদটি বিভিন্ন কারণে দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে অতি সুপরিচিত। আর সেটা মূলত মৌলানা মোহাম্মদ আলী খানকে কেন্দ্র করে। কারণ তৎকালে মৌলানা মোহাম্মদ আলী খান একজন শিক্ষিত, জ্ঞানী-গুণী, আলেম, মোহাদ্দেস, মুফতি, ওলি, কামেল, জনদরদী ধর্মপ্রাণ ব্যাক্তি হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। জানা যায়, ১৮৩৬ সালে মৌলানা মোহাম্মদ আলী খানের পিতৃপুরুষ (দাদা) মিন্নত আলী খান (জন্ম:১৭৯০ মৃত্যু:১৮৬২ খৃঃ) মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। মসজিদটি তখন খড়ের তৈরি মসজিদ ছিল। পরে মসজিদটির ভিত পাকা করে খুঁটির উপর টিনের চালা করে আধাপাকা করা হয়। তৎকালে মসজিদটি বড় মসজিদ নামে প্রচলিত ছিল। পরবর্তীতে ১৯৩০ সালে মৌলানা মোহাম্মদ আলী খান মসজিদটিকে পাকা করে একতলা দেয়ালে রুপান্তর করেন। এরপর মসজিটির নামকরণ করা হয় ‘মৌলানা মোহাম্মদ আলী জামে মসজিদ’।

তৎকালে পাবনা জেলায় মুসলিম সমাজে যে স্বল্প সংখ্যক শিক্ষিত, জ্ঞানী-গুনী, জন-হিতৈষী পূণ্যচরিত্র লোকের পরিচয় পাওয়া যায় তাদের মধ্যে মৌলভী মোহাম্মদ আলী খান একজন বিশিষ্ট ব্যাক্তি ছিলেন। মৌলভী মোহাম্মদ আলী খান ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দে পাবনা  রাধানগরের  একটি সম্ভ্রান্ত-শিক্ষিত পরিবার খান বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন। আব্দুর রহমান খানের (জন্ম:১৮২২ মৃত্যু:১৮৯৭ খৃঃ) কনিষ্ঠ পুত্র ছিলেন মৌলভী মোহাম্মদ আলী খান । তিনি ছোট বয়স থেকেই ধীর স্থির মৃদু ভাষী ছিলেন। ছোট বেলায় পিতার কাছে আরবি, উর্দ্দু ও ফারসি শেখেন। পরে তিনি হুগলি মাদ্রাসায় পড়াশুনা করেন। মাদ্রাসা শিক্ষা শেষ করে তিনি জলপাইগুড়ি সরকারী জিলা স্কুলে শিক্ষকরূপে যোগদান করেন। তাঁর শিষ্ট চরিত্র এবং কয়েকটি ভাষায় জ্ঞানের পরিচয় পেয়ে অল্পদিনের মধ্যেই শহরের গন্যমান্য লোকজনের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন। জলপাইগুড়ির নওয়াব রহিম বক্স চৌধুরী তাঁর সাথে আলাপ করে প্রীত হয়ে তাঁকে নওয়াব বাড়িতে বসবাস করার প্রস্তাব দেন এবং তিনি তাঁর প্রস্তাব সাদরে গ্রহণ করেন। নওয়াব সাহেবের তিন ছেলে- এ রহমান, এফ রহমান ও এল রহমান। নওয়াব সাহেব ছোট দুই ছেলের দেখাশুনা ও তালিমের ভার অর্পণ করেন মৌলভী মোহাম্মদ আলী খানের উপর। এই এফ রহমানই পরবর্তীকালে স্যাার এফ রহমান রূপে খ্যাতিমান ব্যাক্তি, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর হয়েছিলেন।

মৈৗলভি মোহাম্মদ আলী খান জলপাইগুড়ি থেকে হুগলি কলেজিয়েট স্কুলে বদলী হয়ে আসেন। হুগলিতে থাকাকালীন তাঁর বড় বড় আলেমদের সাহচর্যে আসবার সুযোগ লাভ হয়। এই সময়ে কুষ্টিয়ার জনাব মহাতাব উদ্দিন বিশ্বাসের দুই পুত্র শামসউদ্দিন আহমদ ও সদরউদ্দিন আহমদ এই স্কুলে ভর্তি হয়। বিশ্বাস সাহেব তাঁর দুই পুত্রের স্থানীয় অভিভাবক রূপে মৌলভী সাহেবকে মনোনীত করেন। এই সদরউদ্দিন আহমদ কুষ্টিয়া জেলার প্রথম মুসলমান এম.বি ডাক্তার হন। আর শামসউদ্দিন আহমদ হন খ্যাতনামা আইনজীবি, তিনি অবিভক্ত বাংলায় তিনবার মন্ত্রিত্ব পদে অধিষ্ঠিত হন।

মৌলভী মোহাম্মদ আলী খান হুগলী থেকে ঢাকা সরকারী ইসলামীয়া মাদ্রাসায় আরবি বিভাগের প্রধান হয়ে বদলী হয়ে আসেন। ঢাকা ডাফরিন মুসলিম হোস্টেলে তিনি সুপারিনটেন্ডেন্ট ছিলেন। ঢাকা থাকাকালীন তিনি তদানীন্তন খ্যাতিমান মুসলিম ব্যক্তিগনের সাথে পরিচিত হন এবং অনেক জ্ঞানী-গুনী লোকের সান্নিধ্য লাভ করেন। সেখানে তিনি পড়াশুনার যথেষ্ট সুযোগ পান। একাধারে তিনি আরবি, উর্দ্দু, ফারসি, বাংলা ও ইংরেজি পাঁচটি ভাষা জানতেন এবং অনর্গল বক্তৃতা করতে পারতেন। ঢাকায় উচ্চ-পদস্থ সরকারী কর্মকর্তা কেউ এলে নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ বাহাদুরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের রেওয়াজ ছিল। মৌলভী মোহাম্মদ আলী খান নওয়াব বাহাদুরের ওখানে সৌজন্য সাক্ষাতে যান। নওয়াব তাঁর সাথে আলাপ করে খুব প্রীত হন এবং তাঁকে হামেশা আসতে অনুরোধ জানান। নওয়াব বাহাদুর মৌলভী সাহেবকে নওয়াব বাড়িতে থাকবার অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি সম্মানের সাথে অসম্মতি জানান কারণ, তিনি ছিলেন ডাফরিন হোস্টেলের সুপারিনটেন্ডেন্ট। তাঁর সব সময় সেখানে উপস্থিতি প্রয়োজন ছিল। নওয়াব বাহাদুর মৌলভী সাহেবের সাথে ফার্সি ও উর্দ্দু সাহিত্যের উপরে আলাপ আলোচনা করতেন। সেখানে অনেক গুনী লোকের সমাবেশ হতো।

মৌলভী মোহাম্মদ আলী খানের পিতা আব্দুর রহমান খানের মৃত্যুর পর রাধানগর বড় মসজিদের মোতওয়ালীর দায়িত্ব পালন করেন তাঁর ফুফাত ভাই মুন্সী গোলাম আকবর খান। সরকারি চাকুরিতে কর্মরত থাকার কারণে মৌলভী সাহেবকে বাইরে কর্মস্থলে থাকতে হয়েছে বলেই এ দায়িত্ব তাঁর উপর গিয়ে বর্তায়। কিন্তু পরবর্তীতে মুন্সী গোলাম আকবর খানের মৃত্যুতে মৌলভী পরিবার এবং বড় মসজিদের দায়িত্ব পালনে শূন্যতার সৃষ্টি হয়। তদুপরি মৌলানা মোহাম্মদ আলী খান পাবনা বদলী হবার চেষ্টা করেন। পরবর্তী সময়ে নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ বাহাদুর ব্যাক্তিগতভাবে মৌলানা সাহেবকে পাবনা জেলা স্কুলে বদলীর অর্ডার করিয়েছিলেন। পাবনা জিলা স্কুল থেকে ১৯৩০ সালে চাকুরী থেকে তিনি অবসর গ্রহন করেন। তৎপর তিনি পুরাপুরি ইসলামের খেদমতে আত্মনিয়োগ করেন এবং বড় মসজিদটিকে পাকা করার ব্যবস্থা করেন।

মৌলানা মোহাম্মদ আলী খান  একজন  আলেম, মোহাদ্দেস, মুফতি, ওলি, কামেল, জনদরদী ধর্মপ্রাণ ব্যাক্তি হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। যদিও তিনি আহলে হাদিস (মোহাম্মদী) অনুসারী ছিলেন, তথাপি হানাফি ময্হারের অসংখ্য লোক তাঁর মুরিদ ছিলেন। শিয়া সম্প্রদায়ের সাথেও তাঁর হৃদ্যতা ছিল। তিনি অত্যন্ত ভদ্র, অমায়িক ও মৃদুভাষী ছিলেন।  অনেক দরিদ্র, এতিম এবং আত্মীয় স্বজনকে তিনি লালন-পালন করেছেন। বহুলোক তাদের ছেলেকে ‘তালেবুল এলেম’ হিসেবে তাঁর কাছে রেখে যেতন। এদের সকলকে নিয়ে তাঁর বিরাট পরিবার বর্গের ব্যয়ভার মৃত্যুকাল পর্যন্ত তিনি নিজ রোজগারে চালিয়ে গেছেন। তিনি বড় মসজিদের ইমামতি করতেন। বেশির ভাগ সময় বড় মসজিদ সংলগ্ন হুজরাখানাতে লেখাপড়া ও নামাজ কালাম নিয়ে গভীর রাত্রি পর্যন্ত ব্যস্ত থাকতেন। সদা সর্বদা সকলকে কোরআনে বর্ণিত আল্লাহর নির্দেশমত সৎ পথে থেকে রাসুলের জীবনের আদর্শ ও নীতি মেনে চলতে বলতেন। নিয়মিত মুরিদদের সাথে তাঁর যোগাযোগ ছিল। কুষ্টিয়ার উত্তর, পাবনা সদর, এবং রাজশাহীর দক্ষিণ-পূর্ব এলাকাজুড়ে তাঁর অসংখ্যা ভক্ত ও অনুসারী ছিল। মৌলানা সাহেবের বাড়িতে দেশি-বিদেশি অনেক স্থানের নানা রকমের লোকজন আসত। আরব, পারস্য থেকেও অনেকে এসেছেন। হজ্বে গিয়ে মদিনাতে এক বিশিষ্ট আরবিয়র সাথে তাঁর বন্ধুত্ব হয়। মৈৗলভী সাহেব হজ্ব থেকে ফিরে আসার পরের বছর সেই আরবী বন্ধু পাবনা সফরে আসেন এবং কয়েকদিন তাঁর বাড়িতে মেহমান থাকেন। তৎকালে পাবনাতে এই উপলক্ষে বেশ চাঞ্চল্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের সাথে মৌলভী সাহেবের যথেষ্ট হৃদ্যতা ছিল। হক সাহেব যুক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন মৌলভী সাহেবের বাড়িতে বেড়িয়ে যান। হক সাহেব তাঁকে খুব শ্রদ্ধা করতেন।

তৎকালে ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, প্রশাসনিক সব রকম অনুষ্ঠানে মৌলভী সাহেবের আমন্ত্রণ থাকত। জেলা জজ, কালেক্টর, ম্যাজিষ্ট্রেট, এস পি থেকে শুরু করে জেলার অন্যান্য পদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারি প্রায় সকলেই তাঁর সাক্ষাৎ করে দোয়া প্রার্থী হতেন। এদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ছিলেন জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট-এফ করিম, আই জে  ফ্রীক, খান বাহাদুর মাহমুদ, এসপি জাকির  হোসেন (পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর), ফুক সাহেব, খোরশেদ আলম চৌধুরী, হাফেজ সৈয়দ এসহাক, মৌলভী কবির আহমেদ (হুমায়ুন কবিরের পিতা)। এছাড়াও পাবনার সকল ধর্মাবলম্বী খ্যাতিমান লোকদের সাথেও তাঁর সু-সম্পর্ক এবং যোগাযোগ ছিল। তাদের মধ্যে রাধানগর মজুমদারগণ, তাড়াশ, বনওয়ারীনগর, নাহাট্রার ও শীতলাই জমিদারগণ, সৎসংগ আশ্রমের ঠাকুর শ্রী-অনুকূলচন্দ্র, খৃষ্টান পাদরী বলডুইন সাহেব প্রমুখ।

মৌলভী মোহাম্মদ আলী খান ১৩ই এপ্রিল ১৯৫১ সালে ৮৮ বছর বয়সে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। বড় মসজিদ সংলগ্ন পারিবারিক গোরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়।

সম্প্রতি ২০০৮ সালে মৌলানা মোহাম্মদ আলী খানের নাতী-ছেলে জনাব আসাদুল ইসলাম খানের (জন্ম:১৯৪৩ মৃত্যু:২০১৪ খৃঃ) উদ্দ্যোগে ও ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের সহযোগিতায় পুরাতন ভগ্ন মসজিদটি ভেঙ্গে পুনরায় সম্পূর্ণ নতুন করে মৌলানা মোহাম্মদ আলী জামে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে মসজিদটি ৩৯ শতাংশ জায়গার উপর অবস্থিত। যার অভ্যন্তরে রয়েছে ঈদগাহ মাঠ, মৌলানা মোহাম্মদ আলী খানের পারিবারিক গোরস্থান এবং ছাত্রদের মেস। এছাড়াও মসজিদের একটি পুকুর আছে যা রাধানগর আদর্শ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের পশ্চিমে পাবনা ঈশ্বরদী রোড হতে যোগীপাড়ার দিকে যেতে রাস্তা সংলগ্ন উত্তর দিকে পুকুরটি অবস্থিত। সাদারে শেখের স্ত্রী বেবুন্নেসা বিবি ১৯৩২ সালে রাধানগর বড় মসজিদের উন্নয়নের জন্য তার নামিও পুকুরটি ওয়াক্ফ রেজিস্ট্রি দলিল মূলে রাধানগর বড় মসজিদের (মৌলানা মোহাম্মদ আলী জামে মসজিদ) নামে দান করেন।

বর্তমানে মসজিদটি অন্যান্য মসজিদের থেকে একটু নান্দনিক ও আকর্ষণীয়। পাঁচ তলা ভিত বিশিষ্ট মসজিদটি বর্তমানে দোতলা। নিচ তলা পুরুষদের জন্য এবং দোতলায় নারীদের জন্য নামাজের সুব্যবস্থা করা হয়েছে। নারীরা সেখানে জুম্মার নামাজ, তারাবী নামাজ এবং ঈদের নামাজ আদায় করে থাকে।

মসজিদটির ছাদ নির্মাণে পঞ্চগড় হতে আনা কালো পাথর ও বালু ব্যাবহার করা হয়েছে। মসজিদ নির্মাণে যে রড ও সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে তা সরাসরি কারখানা হতে আনা হয়েছে।  মসজিদের ভেতরের মূল কক্ষটির দৈর্ঘ্য ৫৫ ফুট ও প্রস্থ ৩৫ ফুট এবং উচ্চতা ১৩ ফুট। সৌন্দর্যের কথা মাথায় রেখে মসজিদের ভিতরে দীর্ঘ কক্ষের কেন্দ্রবিন্দুতে কোন পিলার ব্যবহার করা হয়নি। মসজিদের কিবলা দেয়ালে একটি কেন্দ্রীয় খিলান মিহরাব রয়েছে। মিহরাবটির দেয়াল টাইল্স দ্বারা অলঙ্কৃত যার উপরিভাগে ‘কালেমায়ে ত্যয়্যিবা’ লেখা আছে। মিহরাবটির দক্ষিণ দেয়ালে একটি ছোট জানালা রয়েছে। কেন্দ্রীয় মিহরাবের দুপার্শ্বে ২টি করে মোট ৪টি ব্যতিক্রমধর্মী কুলঙ্গি রয়েছে। এরমধ্যে ২টি কুলঙ্গিতে মসজিদের ব্যাবহারকৃত জিনিস রাখা হয় এবং অন্য ২টি কুলঙ্গি কাচ দ্বারা আবৃত করে আকর্ষণীয় বই এর লাইব্রেরি করা হয়েছে। সেখানে মৌলানা মোহাম্মদ আলী খান সাহেবের রেখে যাওয়া  মূল্যবান বইসহ অনেক ইসলামি বই রয়েছে । মসজিদের অভ্যন্তরে উত্তর ও দক্ষিণের আচ্ছাদনে ঝুলন্ত ২টি আকর্ষণীয় ঝারবাতি রয়েছে। মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ পার্শ্বে প্রতি তলায় ৪টি করে মোট ৮টি কাচের খিলান যুক্ত জানালা রয়েছে। জানালাগুলোর বাইরের দেয়ালের কার্নিসগুলোও খিলান আকৃতির। মসজিদের পূর্ব পার্শ্বে বারান্দা মুখি আরও ২টি কাচের খিলান যুক্ত জানালা রয়েছে। মসজিদের পূর্ব পার্শ্বে ৩টি কাচের খিলান যুক্ত দরজা রয়েছে যা মসজিদের প্রধান প্রবেশ-পথ। এ তিনটি প্রবেশ-পথের মধ্যে কেন্দ্রীয় প্রবেশ-পথটি অপেক্ষকৃত বেশি বড়। মসজিদের পূর্ব পার্শ্বে একটি বারান্দা রয়েছে যার দৈর্ঘ্য ৫৫ ফুট ও প্রস্থ ১৫ ফুট এবং উচ্চতা ১৩ ফুট। বারান্দার উত্তর ও পূর্ব পার্শ্বে ২টি উন্মক্ত প্রবেশ পথ রয়েছে। মসজিদের মেঝেতে উৎকৃষ্টমানের টাইল্স ব্যাবহার করা হয়েছে। মসজিদটির মূল কক্ষে ৭ টি কাতার ও বারান্দায় ৩ টি কাতার রয়েছে। বর্তমানে মসজিদটিতে প্রায় ৭০০ জন মুসল্লি এক সাথে জামাতে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের উত্তর পার্শ্বে দোতলায় উঠার সিঁড়ি দন্ডায়মান ও সিঁড়ির নিচে একটি সিঁড়ি-ঘর ও হুজরা খানা রয়েছে। মসজিদের বাইরে সিঁড়ির ডান পার্শে। ওযুখানা ও টয়লেট রয়েছে। প্রতি বছর মসজিদ সংলগ্ন ঈদগাহ মাঠে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজাহার সময়ে পুরুষ ও নারীসহ প্রায় ৩ হাজার মুসল্লি নামাজ পড়ে আসছে।

মসজিদটির বর্তমান মুতাওয়াল্লি মৌলানা মোহাম্মদ আলী খানের নাতী-ছেলে জনাব আমিরুল ইসলাম খান জানান, মসজিদ উন্নয়নে অর্থ সংগ্রহ থেকে শুরু করে মসজিদের যাবতীয়  কাজে  জনাব আসাদুল ইসলাম খানের অনন্য ভূমিকা ছিল। তাঁর মৃত্যুতে মসজিদের উন্নয়ন কাজে ব্যাহত হয়েছে। বর্তমানে আর্থিক সংকটের কারণে মৌলানা মোহাম্মদ আলী জামে মসজিদের উন্নয়ন কাজ  এখনও সম্পন্ন করা যায় নাই। তবে আমরা প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। ইন-শা-আল্লাহ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের সহযোগীতায় এবং আল্লাহর রহমতে অতি সত্ত্বর আমরা মসজিদটির উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি করতে পারব।

*সূত্র: বিশিষ্ট সাহিত্যিক আনিসুল ইসলাম খানের লেখা মৌলানা মোহাম্মদ আলী খানের বংশীয় ইতিহাসের পাণ্ডুলিপি ও মসজিদের দেয়ালে উৎকীর্ণ লেখনী থেকে।

(Visited 6 times, 1 visits today)

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *