আইইউবিএটি’র গৌরবময় ৩২ বছর

শেয়ার করুন

দেশের প্রতিটি গ্রাম থেকে অন্তত একজন পেশাদার স্নাতক গড়ে তোলার প্রত্যয়ে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক এম আলিমউল্যা মিয়ানের উদ্যোগে ১৯৯১ সালে দেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউবিএটি)। 

ঢাকার উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে নিজস্ব ২০ বিঘা জমিতে আইইউবিএটির রয়েছে সবুজ ক্যাম্পাস। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আট হাজারের অধিক  শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬টি অনুষদে ১২টি প্রোগ্রামে পড়ছেন। তাদেরকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে রয়েছেন প্রায় ৩০০ শিক্ষক। যাদের মাঝে আছেন ৮০ জনের বেশি পিএইচডিধারী। আইইউবিএটিতে স্নাতক পর্যায়ে বিবিএ, পুরকৌশল, কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল, যন্ত্র প্রকৌশল, অর্থনীতি, ইংরেজি, কৃষি, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট এবং নার্সিং বিষয়ে পড়া যায়। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে এমবিএ এবং এমপিএইচ প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়ার সুযোগ আছে।

নয়নাভিরাম সবুজ মাঠ, উন্মুক্ত স্টাডি এরিয়া, শহীদ মিনার, খেলার মাঠ, গাছপালা-পুকুরে ঘেরা এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। ফ্রি ওয়াইফাই, ইনডোর ও আউটডোর গেইমসহ সব মিলিয়ে ‘এন এনভায়রনমেন্ট ডিজাইনড ফর লার্নিং’ অর্থাৎ শিক্ষার পরিকল্পনায় তৈরি পরিবেশ কথাটি যেন এই ক্যাম্পাসেই দেখা যায়। দেশের প্রতিটি গ্রাম থেকে অন্তত একজন দক্ষ স্নাতক গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে আইইউবিএটি। যেন স্নাতকরা তাদের নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, গ্রামের জন্য, সমাজের জন্য সর্বোপরি দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। কোনো ফি ছাড়াই ঢাকার অনেকগুলো রুটে শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আছে পরিবহন ব্যবস্থা।

এমন প্রাণবন্ত ক্যাম্পাসে বছরজুড়ে চলে নানা আয়োজন। পড়াশোনার পাশাপাশি সবুজ মাঠের বুকে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে চলে নানা খেলাধুলার আয়োজন। প্রতিযোগী মনোভাব ধরে রাখতে শিক্ষার্থীদের মাঝে চলে আন্তঃবিভাগ নানা আয়োজন। এছাড়া বিতর্ক, নাচ, গান, রোবটিকস কম্পিটিশন, প্রোগ্রামিং কনটেস্ট, বিজনেস কেস কম্পিটিশনসহ নানা আয়োজনের নিজেদের সেরাটা দিয়ে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সেরাদের সারিতে অবস্থান করে নিয়েছে আইইউবিএটিয়ানরা। বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের (বিএনসিসি) প্লাটুন, রোটারাক্ট, ডিবেটিং ফোরাম, স্টুডেন্ট অ্যামবাসেডর সব সময় সক্রিয় থাকে আইইউবিএটি এর সবুজ ক্যাম্পাসে।

আর্থিকভাবে পিছিয়ে পরা মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেয় আইইউবিএটি। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত মেধাবৃত্তি দেওয়া হয়। এছাড়া মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় উৎসাহিত করতে ১৫ শতাংশ বিশেষ বৃত্তিসহ বিভিন্ন বিভাগে আরও ৯০টি বৃত্তি দেওয়া হয়। যেসব মেধাবী শিক্ষার্থী আর্থিক সচ্ছলতার অভাবে উচ্চশিক্ষা নিতে পারছেন না, তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা আছে আইইউবিএটিতে।

১৯৯৭ সালে আইইউবিএটি অ্যাসোসিয়েশন অব কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটিজের সদস্য হয়, যার মাধ্যমে কমনওয়েলথের সব দেশেই আইইউবিএটির ডিগ্রি স্বীকৃতি পায়। পরিবেশবান্ধব ক্যাম্পাস হিসেবে ২০০৮ সালে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ‘গ্রিন ক্যাম্পাস’ হিসেবে ঘোষণা দেন। এ ছাড়া ২০২২ সালের ইউআই গ্রিন মেট্রিক ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশে আইইউবিএটির অবস্থান দ্বিতীয়, আর বিশ্বের ১০৪টি দেশের ১০৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অবস্থান ২৫৪তম। 

২০২১ সালে উরি (ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিস উইথ রিয়েল ইমপ্যাক্ট) র‌্যাঙ্কিংয়ে নৈতিক মানের বিবেচনায় বিশ্বের শীর্ষ ৫০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় স্থান ৩৯তম অবস্থান অর্জন করেছে আইইউবিএটি। ২০২২ সালের দ্য টাইমস হায়ার এডুকেশন ইমপ্যাক্ট  র‌্যাঙ্কিংয়ে ৬০১-৮০০ তম অবস্থানে আছে প্রতিষ্ঠানটি। শিমাগো ইনিস্টিটিউশনস র‌্যাঙ্কিং ২০২২ এ সারা বিশ্বে আইইউবিএটির অবস্থান ৭৩৫তম। বিশ্বের ২৭টিরও বেশি দেশের ১১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমঝোতা সাক্ষর চুক্তি হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। যার ফলে প্রতিবছর শিক্ষক-ছাত্র অনুষ্ঠানের আওতায় এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন পড়াশোনা করার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে আইইউবিএটির শিক্ষার্থীরা। আইইউবিএটির ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রামগুলো আইইবি-দ্য ইনিস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ারস, বাংলাদেশের অনুমোদিত। এছাড়া বিবিএ প্রোগ্রামটিও এসিবিএসপি-অ্যাক্রেডিয়েশন কাউন্সিল ফর বিজনেস স্কুল অ্যান্ড প্রোগ্রাম থেকে অনুমোদন পেয়েছে।

আইইউবিএটির যাত্রার শুরু থেকেই লক্ষ্য ছিল পেশাদার স্নাতক তৈরির মাধ্যমে যেন আর্থসামাজিক উন্নয়ন সৃষ্টি করা যায়। আইইউবিএটি অ্যালামনাই অ্যান্ড প্লেসমেন্ট অফিস থেকে প্রতিটি স্নাতককে তাদের যোগ্যতা অনুসারে চাকরি খুঁজে পেতে সাহায্য করা হয়। প্রতিবছর দেশ-বিদেশের শতাধিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে আইইউবিএটি ক্যাম্পাসে আয়োজন করা হয় ন্যাশনাল ক্যারিয়ার ফেস্টিভ্যাল। যেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিয়োগকর্তারা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত পদের জন্য প্রার্থীদের চাকরির সুযোগ দেন। এছাড়া নিয়মিত ক্যাম্পাসে আয়োজন করা হয় নানা রকম কর্মশালা। যা শিক্ষার্থীদের চাকরির বাজারের প্রতিযোগিতার জন্য গড়ে তোলে। দেশের উচ্চপর্যায়ের ব্যাংক, টেলিফোন সেবা, এফএমসিজিসহ নানা ক্ষেত্রে আইইউবিএটি এর স্নাতকদের দৃঢ় অবস্থান আছে। দেশের পাশাপাশি যুক্তরাজ্য-ইউরোপের নানা দেশেও আইইউবিএটি এর স্নাতকরা ভালো প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন।

দেশের প্রতিটি গ্রামে ছড়িয়ে পড়ার যে প্রত্যয় নিয়ে আইইউবিএটি যাত্রা শুরু করেছিল, সেই প্রত্যয় অনেকটাই সফল হয়েছে। শুধু দেশের ভেতরেই নয়; বরং আন্তর্জাতিক পরিসরে নিজেদের সেরাটা দিয়ে মেলে ধরতে চায় আইইউবিএটি। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আগামীর প্রজন্মকে প্রস্তুত করতে আইইউবিএটির এই প্রয়াস অব্যাহত থাকবে। সংগৃহীত

(Visited 2 times, 1 visits today)

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *