মাটি – মোখলেস মুকুল

শেয়ার করুন

মোখলেস মুকুলঃ সিরাজ জিন্নাতের মাইক্রোবাসটি উখিয়া বাসস্ট্যান্ডের সেই পুরনো চেনা চায়ের দোকনের পাশে এসে যখন থামে তখন বেলা পাঁচটা। জানুয়ারির গোড়ার দিক হওয়ায় এটা ছিল হাড় কাঁপান শীতের বিকাল। তখন পৃথিবীর মাটিকে অন্ধকার ঘিরে ফেলছে। দোকান থেকে টাটকা কেমিক্যালমুক্ত পাহাড়ী কলা খেতে খেতে অনেক কিছু ভাবেন তিনি। তারপর গরম চায়ের সাথে চুরুটের ধোয়া; নিজেকে আর একটু চাঙা করে নেয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেননি। তাকে দেখতে সাধারণ মনে হলেও চোখদুটো যেন ঈগল, আক্ষরিক অর্থে দূরবিক্ষণ এবং অণুবিক্ষণযন্ত্র; পর্যবেক্ষণ চলছিল চারদিক, যদিও তার চোখে সানগ্লাস। বয়স ষাটোর্ধ্ব, মুখে কাঁচা-পাকা ছাঁটা চাপদাড়ি, মাঝারি উচ্চতায় হালকা গড়ন। সামান্য ভুঁড়ির লক্ষণ আছে। কম কথা বলেন, আর যা বলেন তাতে বোঝা যায় অন্তরে এক পোড়খাওয়া শৃগাল বাস করে। ঢাকা ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মাস্টার্স পরীক্ষা ফেলে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। একটা ইউনিট কমান্ডার ছিলেন। আহত মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে মিরপুরে সাড়ে তিন কাঠার একটা প্লট পান। শুরু থেকে শেষাব্দি এই তার সম্পদ। বাড়ি ভাড়ায় সংসার চলে। বই-পত্রিকায় ডুবে থাকা নেশা এবং একজন ভ্রমন রসিকও বটে। প্রায়শ দুদিন পাঁচদিন এখানে সেখানে বেড়াতে চলে যান। কোথায় যান, কেউ জানে না। আজ এসেছেন কক্সবাজারের উখিয়ায়। এখান থেকে আরও ছয় সাত কিলো দক্ষিণ-পশ্চিমে পাহাড়ী টিলাপথ ধরে পৌঁছতে হবে জালিয়া পালং এর সমতল ভূমির সাগর তীরে। সেখানকার ‘উখিয়া নেচারাল সল্ট এন্ড রিফাইনারি লিঃ’; একটি লবণ কারখানা তার গন্তব্য। লবণ রিফাইন এবং বাজারজাত; কারখানার আসল কাজ, সবাই তাই জানে। এটা মূলত নিষিদ্ধ সংগঠন উলাটো-র (টখঅঞড- ইউনাইটেড লিবারেশন আর্মি অব থার্ড ওয়ার্ল্ড) প্রশিক্ষণ শিবির। এরকম প্রশিক্ষণ শিবির বাংলাদেশে আরও নয়টি আছে। প্রায় সবগুলোয় সীমান্ত ঘেঁষে, জঙ্গল বা পাহাড়ী এলাকায়। সিলেটের জাফলং-এ আছে পাথরের ব্যবসার আড়ালে, সুনামগঞ্জে শুটকির আড়তের আড়ালে, খুলনার পাথরঘাটায় মধু ব্যবসাকে ফোকাস করে ইত্যাদি। সিরাজ জিন্নাত উলাটো-র বাংলাদেশ প্রধান। মধ্যরাত। চারিদিক গাঢ় অন্ধকার। ভূতবাজির নীরবতা। পূব ঘেঁষে উঁচু-নিচু পাহাড়ী বনভূমি। সেখান থেকে মাংসখেকো বন্যজীব-জানোয়ার বা ক্ষুধার্ত বড় ডানাঅলা পাখির চিৎকার শোনা যায়। পশ্চিমে বেশ দূর থেকে ভেসে আসে অশান্ত সাগরের অস্পষ্ট অথচ বিরতিহীন গর্জন। এর মাঝে একদল সাহসী সৈনিক পৃথিবীর মাটিকে রক্ষার সংগ্রামে জাগ্রত। কারখানার মাঝারি মাপের একখানা কক্ষে টিমটিমে আলোতে বসে জিন্নাত, তবুও চোখে সানগ্লাস। গায়ে মোটা জ্যাকেট, মাথায় হ্যাট, ঠোঁটে চুরুট। তার পাশের চেয়ারে কারখানার মালিক এবং উলাটোর বিশ্বস্ত কর্মী মাজেদ শেখ। মাঝে টেবিলের উপর নানান যন্ত্রপাতি; ল্যাপটপ, ওএইচপি, প্রোজেকটর, ডিভিডি প্লেয়ার থেকে শুরু করে নানান দেশের ম্যাপ, কাগজ, কলম, মার্কার, চক-ডাস্টার আরও কত কী। দেয়ালে সিনেমাস্কোপ স্ক্রিন, ইজেল বোর্ড। টেবিলের ওপাশে পনের জন প্রশিক্ষণার্থী। সবাই ইউনিভার্সিটি, মেডিকেল বা ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র; তাদের মধ্যে বার্মিজ, ভারতীয়, আফগান, ইরানী, ভিয়েতনামী, কম্বোডিয়ান এবং পাকিস্তানি।
মাজেদ শেখ সবাইকে সংগ্রামী শুভেচ্ছা জানিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করেন এবং রাত্রিকালীন কর্মসূচি জানান। আজকের আকর্ষণ সিরাজ জিন্নাত ও ডকুমেন্টারি ফিল্ম শো ‘দ্য আর্থ’।
পিছনের সারির এক কোণায় একটু বেশি অন্ধকারে বসে সনম। সে চুয়েটে-র কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড্ ইঞ্জিনিয়রিং এর ফাইনাল ইয়ার। তার পাশে বসেছে সিলেট শাহ জালাল প্রযুক্তির বিবিএ-র ছাত্র সুমিত।
সিরাজ জিন্নাত ননস্টপ বক্তৃতা দেন, এখন তৃতীয় বিশ্বের প্রায় সব দেশের মাটি অরক্ষিত। প্রথম বিশ্বের মোড়লরা গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, সন্ত্রাস নির্মূল, শিক্ষা বিস্তার ও সেবা বিতরণের নামে আগ্রাসন ও শোষণ করছে। তারা মস্তিষ্ক ও অস্ত্রের জোরে এসব দেশের তেল, গ্যাস, কয়লা, সোনা, হীরে, ইউরেনিয়াম লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবাদ করলেই সন্ত্রাসবাদীর নাটক সাজিয়ে সামরিক অভিজান চালায়। মানুষ হত্যা করে। এরই প্রতিবাদে আমরা তৃতীয় বিশ্বের নির্যাতীত, নিপিড়ীত দেশ ও জাতি গঠন করেছি উলাটো। এটা কোনো সন্ত্রাসী দল নয়। আমাদের কাজ হল অবহেলিত এইসব জাতির উর্বর মস্তিষ্কের লোকদের সচেতন করে গড়ে তুলে প্রথম বিশ্বের এই ঘৃণিত কার্যক্রমের প্রতিবাদ করে একটি সাম্যের বিশ্ব গড়ে তোলা। উলাটোর এই আদর্শ ও উদ্দেশ্য বিশ্বের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান আইএসও-কে (ইন্টারন্যাশনাল স্টেট অরগানাইজেশন) জানিয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য আইএসও এবং তাদের সকল অঙ্গ সংগঠন সেসব মোড়লদের পকেটে চলে গেছে। তাদের স্বার্থে আঘাত লাগায় উলাটো-কে নিষিদ্ধ করা হয়েছে…।
চা বিরতির পর আবার কার্যক্রম শুরু হয়। সবাই অখণ্ড মনোযোগ দিয়ে উলাটোর সদস্য দেশগুলোর ম্যাপ দেখে। ওএইচপি-র ফিক্সড স্লাইডে আফগানিস্থান, ইরাক, পাকিস্তান, লিবিয়া, সিরিয়া এবং বহু পূর্বের ভিয়েতনামে সামরিক হামলা চালিয়ে যে ব্যাপক ক্ষতি করা হয়েছে তার কিছু দুর্লভ ছবি দেখে সবাই শিউরে উঠে। কোথায় কোথায় তাদের মূল্যবান সম্পদ রয়েছে যা তারা লুট-পাটের পাঁয়তারা করছে তাও দেখান হয়।
ঠিক তিনটের সময় লাইট অফ করায় আইস ব্রেকিং হয়। প্রজেক্টর চালিয়ে ফিল্ম শো শুরু করতেই সবাই নড়েচড়ে বসে এবং সনম সুমিতকে বলে, ‘দ্য আর্থ’ শুরু হচ্ছে, দেখ দেখ…।
‘দ্য আর্থ’
স্টারিং- আব্দুল আজিজ (ইরান), অং সান মি (ভিয়েতনাম), রফিক তারেক (বাংলাদেশ)…
সাউন্ড্ রেকর্ডিং- ইরান…
ডিরেক্টর-ভ­াদিমির সালামিরভ (উজবেকিস্তান)…
প্রোডিউচার- ইরান, ইরাক, লিবিয়া, মায়ানমার, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ ও উজবেকিস্তান শাখা, উলাটো।
দূর থেকে উঁচু গোল থাম ও গম্বুজওয়ালা বিশাল সাদা একটা বিল্ডিং দেখা যায়। বোঝা যায়, প্রথম বিশ্বের সবচাইতে ক্ষমতাধর একটি দেশের প্রধান ভবন। বড় বড় বিল্ডিং সেদেশের শহরগুলোতে। থামওয়ালা বিল্ডিং থেকে ফোকাস গিয়ে স্থির হয় একটা হল রুমে। সেখানে কোট-টাই পরা দুজন পুরুষ এবং স্কার্ট পরা ফিট-ফাট আকর্ষণীয় চেহারার এক মহিলাকে কারোর অপেক্ষায় বসে থাকতে দেখা যায়। তারা নিজেদের মধ্যে নিচুস্বরে কথা বলে আর হাসাহাসি করে। একটুপর জুতায় কচমচ শব্দ তুলে বয়স্ক, ভারিক্কি চেহারার কোট-টাই পরা একজন সেখানে প্রবেশ করেন। তাকে প্রচণ্ড প্রত্যয়ী, উচ্ছ্বাসিত, উচ্চকিত মনে হয় এবং দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, ফক্স মার্ক! লায়ন ট্রেড! লিজার্ড ম্যাক্স! কনগ্রাচুলেশনস, নতুন মন্ত্রী হিসাবে শপথ নেবার জন্যে। তোমরা কেমন আছ?
সবাই মাথা নিচু করে অভিবাদন জানায়, ইয়েস ড্যাসিং হিরো, ভাল। আমরা নিশ্চিত যে আপনিও ভাল।
হিরো বলেন, দল পরিবর্তন হলেও আমাদের পররাষ্ট্রনীতির কোন পরিবর্তন হয় না। হিরো তার পাশে বসা স্কার্ট-সুন্দরীর দিকে তাকান, ‘ফক্স মার্ক’ আই মিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তুমি আসলে আমার ডান হাত। সুতরাং তোমার কাছ থেকে আমি তেমনটাই আশা করি।
ইয়েস হিরো। উৎফুল্ল ফক্স মার্ক।
এবার হিরো ইয়া মোটাসোটার দিকে তাকান, ‘লায়ন ট্রেড’! তুমি হলে হিংস্র দানবতুল্য এবং আমার বাম হাত। এ দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা এমনই হয়।
ইয়েস হিরো। লায়ন ট্রেডের গর্বে বুক ফুলে উঠে।
ড্যাসিং হিরোর দৃষ্টি স্থির হয় ক্ষীণ স্বাস্থ্যের শেষ জনের উপর। লিজার্ড ম্যাক্স! বেশ একটা হুংকারের মত শোনা যায়।
মাজার বেল্ট টেনে তুলতে তুলতে দাঁড়ায় সে, বলুন হিরো।
ঈগল চোখ, শকুন নাক এবং শেয়াল স্বভাবওয়ালাদের কেবল গোয়েন্দা প্রধানের দায়িত্ব দেয়া হয়। তুমি আমার চোখের আলো। বুঝেছ?
ইয়েস হিরো, সরু থুতনির নিচে নড়েচড়ে উঠে, বুঝেছি।
সনম ফিসফিস করে সুমিতকে বলে, ঐ দেশের সবাই প্রেসিডেন্টকে ‘ড্যাসিং হিরো’ বলে। যেমন- জার্মানিরা হিটলারকে বলত ফুয়েরার এবং রুশরা তাদের নেতাদের বলে কমরেড।
সনমের মুচকি হাসি সুমিত অন্ধকারেও টের পায়। চুপ কর শালা। ঐ দেখ প্রেসিডেন্ট সবাইকে ফাইল-পত্র দিয়ে কিসব বলছে।
সবার দৃষ্টি ফাইলের উপর। ড্যাসিং হিরো বলেন, সব কথার শেষ কথা- ছলে-বলে কৌশলে এ পৃথিবীর মাটি আমাদের দখলে রাখতে হবে।
এবার বেশ কিছুক্ষণ ক্যামেরা ঘোরাঘুরি করে সেদেশের উঁচু উঁচু বিল্ডিংওয়ালা শহরের উপর। টাইট জিন্স পরা নানা বয়সের নারী-পুরুষেরা যেন নির্বিকার চাকা এবং গন্তব্যের ভাবনায় অস্থির। তারপাশে দেখা গেল নীল জলের ভরা যৌবনের সাগর, তাতে সচল সৌখিন জাহাজ আর প্রচণ্ড গতিতে থাকা স্পীডবোড। সেটার তীর ঘেঁষে এক বিশাল মূর্তি, হাতে মশাল। তারপর আবার সেই থামঅলা সাদা বিল্ডিং। সেখান থেকে ফোকাস স্থির হয় সেই অফিস কক্ষে। বোঝা গেল কিছুদিন পরের ঘটনা। ড্যাসিং হিরো তার অফিসে সোফায় বসে চোখ বন্ধ করে কী যেন ভাবছেন। তার পিএস গোলগাল টাইট জিন্সের এক যুবতি, বুকের অর্ধেকটা খোলা, সে ড্যাসিং হিরোকে একটা বিয়ারের ক্যান হাতে ধরিয়ে সে নিজেও একটাতে চুমুক দেয়। হিরো যুবতির বাম হাত থেকে একটা ফাইল নিয়ে পাশে সোফায় ফেলে তাকে কোলের উপর বসান। যুবতী দু-পা দু দিকে রেখে হিরোর উরুর উপর বসে তার দিকে এক যাদুকরী দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে থাকে…
হিরোর হাসিতে লোলুপতা উপছে পড়ে, ঠোঁট চঞ্চল হয় তার ঠোঁটের উপর, বাহু দিয়ে পিশে মারার চেষ্টা করেন…
এ সময় বাইরে লাল বাল্ব জ্বলছিল এবং তিন মন্ত্রী বারবার হাতঘড়ি দেখছিল। আজ স্পেশাল মিটিং আছে। কিছুক্ষণ পর সবুজ আলো জ্বেলে উঠলে সবাই ভিতরে প্রবেশ করে। সুমিত একটা বিশ্রি গাল দেয়। সনম বলে, শালা নাম্বার ওয়ান লুচ্চা। সনম আর সুমিত মিটমিট করে হাসে…।
ড্যাসিং হিরোর চোখ বোজা এবং ভারিক্কি মেজাজে চেয়ারে দুলছেন। হঠাৎ সোজা হন, তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলেন, ফক্স মার্ক! প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিশ্বেকে কবজায় রাখার জন্যে কী পরিকল্পনা করেছ?
ফক্স মার্ক একজন দুর্দান্ত সুন্দরী। পঞ্চাশেও বয়স বোঝা যায় না। কণ্ঠ নেকো, শেয়ালের মতো। হুক্কাহুয়ার ধাচে বলে, আমাদের ‘ওয়ার এগেইনস্ট টেরোরিজম’ এর নীতির সাথে প্রথম বিশ্বের সবাই একমত। ডোন্টওরি এ্যাবাউট সেকেন্ড্ ওয়ার্ল্ড, তারা নিজেদের উন্নয়ন নিয়ে মহাব্যস্ত। সমস্যা তৃতীয় বিশ্বকে নিয়ে। কিন্তু প্রিয় ড্যাসিং হিরো ওরা জানে না আমাদের নাটক কতটা জটিল আর ভয়াবহ। দরকার হলে আরও দশটা টাওয়ার ধ্বংস করে ওদের সন্ত্রাসবাদী বানাব। তারপর এ্যাঁ…এ্যাঁ…। হাতে হাত পিষে হিরোকে দেখায় আর মুচকি মুচকি হাসে।
অলরাইট! ধন্যবাদ, ফক্স মার্ক। সন্তুষ্টির হাই তুলে ড্যাসিং হিরো প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন লায়ন ট্রেডের দিকে। লায়ন ট্রেড তুমি কী কী পদক্ষেপ নিয়েছ?
লায়ন ট্রেড বীর পুরুষ। উচ্চতায় ছয় ফিটের বেশি, ওজন সোয়াশ কেজি ছাড়িয়ে যাবে। লায়নের ঘ্যাসঘ্যাসে স্বরে মৃদু হুংকার, ওহ্ ড্যাসিং হিরো! ইউ কান্ট ইমাজিন, আমরা কী করতে পারি! বলতে আমার নিজের গায়ের রোমই শিউরে উঠছে। এই দেখুন; শার্টের হাতা গুটিয়ে নিজের হাত হিরোকে দেখায়।
হিরো বলে, ওকে ওকে। কী করতে পার সেটাই বল।
লায়নের গর্জন শুরু হয়, আমাদের অগনিত পারমানবিকশক্তি চালিত ডেস্ট্রয়ার, অত্যাধুনিক জঙ্গি বিমান, পারমানবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ইন্টার কন্টিনেন্টাল ব্যালাস্টিক মিসাইল ছাড়াও এটম, হাইড্রোজেন, নিউট্রোন বোমা আছে। এসব দিয়ে মুহূর্তে বিশ্বকে ছাই বানিয়ে ফেলতে পারি। এর উদাহরণ ছয়, নয় আগস্টের ‘লিটল বয়’ এবং ‘ফ্যাট ম্যান’। তবে নতুন মিলিনিয়ামে আমাদের যুদ্ধের ধরণ পাল্টে ফেলেছি। এখন স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রিত চালকবিহীন ড্রোন হামলা চালিয়ে আমরা হান্ড্রেট পারসেণ্ট সেভ থেকে ওদের উচিৎ শিক্ষা দিচ্ছি। নাও আই লাইক টু হুইসপার। সে ড্যাসিং হিরোর কানের কাছে মুখ রেখে ফিসফিস করে, মধ্যপ্রাচ্যকে বাগে রাখতে আমাদের ‘হলি চাইল্ড’-কে এইসব মরণাস্ত্র বেশুমার দেওয়া আছে। ও আমাদের বিশ্বস্ত এবং অনুগত, হুকুমের দাস। আতএব নো চিন্তা ডু ফুর্তি…। এসময় ইনসেঠে মাঝে মাঝে পাঁচ বাহুর একটা বিশাল ভবন অনেক উঁচু থেকে ঘুরে ঘুরে দেখান হচ্ছিল।
ড্যাসিং হিরো ক্লিন সেভড্ তবুও নাকের তলদেশ বাম হাতের আঙুল দিয়ে বারবার পাকাচ্ছিলেন, যেন তিনি অদূর ভবিষ্যতে গজিয়ে উঠা মোচে আগাম তা দিয়ে অভ্যেস করছেন।
ড্যাসিং হিরোর রিভলবিং চেয়ার এবার লিজার্ড ম্যাক্স এর দিকে ঘুরে যায়। তুমি কী বলবে?
লিজার্ড ম্যাক্স হাড্ডি খিজিরের মত দেখতে। খালি গা হলে মনে হয় বাচ্চরাও তার বুকের টুয়েলভ পেয়ার অব রিবস অনায়াসে গুনে ফেলতে পারে। তার মেয়েলি ক্যান ক্যানে গলা। মাঝে মাঝে গলা থেকে টিক টিক আওয়াজ বের হয়। সে বলে, ধন্যবাদ ড্যাসিং হিরো। সারা বিশ্বে এমন কোন দেশ, এমন কোন সংস্থা, এমন কোন পলিটিক্যালপার্টি, এমন কোন ইনফ্লুয়েন্সিয়াল, এমন কোন টেরোরিস্ট, এমন কোন বেঈমান নাই যাদের অভ্যন্তরে বা মন মগজের ভিতর আমাদের লোক নাই। আমাদের নেটওয়ার্কিং ইন্টারনেটের চেয়ে কয়েক হাজার গুন বেশি উন্নত ও কার্যকর। আমরা যেমন নির্ভুল তত্ত্ব-উপাত্ত দিতে পারদর্শী ঠিক তেমনি কথা বের করে নিতেও সিদ্ধহস্ত। কেউ যদি কথা পেটে হজম করে ফেলে, তার মল থেকে এমনকি প্রস্রাব থেকেও কথা খুঁজে পেতে পারি। কেউ যদি মনের অজানা কুটিরে কথা লুকিয়ে রাখে সেখান থেকেও মাই-স্ক্যানার দিয়ে কথা প্রিন্ট করে আনতে পারি।
এসব কথা শুনে ড্যাসিং হিরোর বুক ছয় ইঞ্চি ফুলে পটপট করে তার স্যুটের তিনটি বোতাম ছিঁড়ে যায়। নেকটাই গলায় এঁটে ফাঁস লেগে প্রাণ যাই যাই অবস্থা। তিনি দু হাতে টাই এর নট খুলতে না পেরে গোঁ. গোঁ.. গোঁ… করতে থাকেন। দ্রুত তার তিনজন পিএস মূল্যবান ফাইল দিয়েই বাতাস দিতে থাকে। নেকটাই ঢিলে করা হয়। এসির তাপমাত্রা আরও কমিয়ে তাকে তাৎক্ষণিক শংকা মুক্ত করা হয়। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে তিনি ধাতস্ত হন। এদিক ওদিক তাকিয়ে সবাইকে রিপিটেডলি ধন্যবাদ দেন। তারপর তিনি সবার উদ্দেশ্যে বলেন, হিরে-মানিকেরা একটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে যাও, আগামী একমাসের মধ্যে এই গ্রহের কোন কোন দেশ আমাদের বিপক্ষে এবং কোন বেজন্মা নেতা আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলে তাদের একটা তালিকা তৈরি করে আমাকে জানাবে। ওকে বাই অ্যান্ড্ গুড নাইট।
এক মাসের মাথায় রথি মহারথিরা আবারও মিটিংএ বসেছেন। ড্যাসিং হিরোর দু’পাশে দু’জন স্কার্ট পরা সুন্দরী তরুণী পিএস এসে দাঁড়ায়। একজন তার দিকে একটি ফাইল এগিয়ে দেয়, প্রিয় ড্যাসিং হিরো, এখানে সব তালিকা দেয়া আছে।
গুড, ভেরি গুড। ড্যাসিং হিরো তালিকায় চোখ রাখেন, দুটি পরাশক্তি আমাদের বিপক্ষে। এ্যাঁ, হ্যাঁ, যেতে দাও। ভেটো পাওয়ার ছাড়া দুই একটা কোঁকড়ানো লোম ছেঁড়ার ক্ষমতা আছে বটে। এতক্ষণ তার ডান হাত ছিল প্যান্টের ভিতর আন্ডার ওয়্যার এর নিচে। সেটা ওখান থেকে বের করে একটা কোঁকড়ান চুল দেখতে দেখতে বলেন, প্রতিপক্ষ না থাকলে খেলাটা একপেশে, প্রাণহীন হয়। হঠাৎ তিনি চেয়ার ছেড়ে সোজা হন। ভ্রু কুঁচকে ফক্স মার্কের দিকে তাকান, প্রায় পঞ্চাশটি দেশ আমাদের বিপক্ষে। এব্যাপারে তোমার মন্তব্য কী?
ডোন্ট ওরি! ড্যাসিং হিরো! আপনি হুকুম দিলে ওদের ছাই বানাতে পনের দিন সময় লাগবে। তারপর উড়োজাহাজ ভর্তি করে সেসব ছাই উপঢৌকন হিসাবে আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশে পাঠিয়ে দেবেন। দামি দামি প্লেট বাটি কাটলারিজ মাজার জন্যে। বলতে বলতে লেডি ফক্স মার্ক স্কার্ট টেনে নামাতে চেষ্টা করে এবং সোজা হয়ে বসে টপসের দুটো বোতাম লাগায়। মনে মনে বলে, শালার নজর খারাপ।
এতক্ষণ ড্যাসিং হিরো কী শুনছিলেন কে জানে, তার চোখ ঐ বোতামের নিচে আর হাটুর উপরদিকটায় ঘোরাঘুরি করছিল। তিসি সতর্ক হয়ে চেয়ারে হেলান দিলেন, জাস্ট লাইক এ গুড গার্ল। ফের তিনি লায়ন ট্রেডের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, একশ বায়ান্নজন বেজন্মা বাঁদীর বাচ্চার একটা তালিকা আছে, যারা আমাদের সমালোচনামুখর। তাদের ঠাণ্ডা করবে কিভাবে?
একশ বিশ কেজি ওজনের মনুষ্য দানবের হুংকার ফুত করে নিভে যায়, মাইডিয়ার হিরো, আই মিন, আই মিন ওদের নিয়ে বহুত ফ্যাসাদে আছি, বান্দীর বাচ্চাদের বাগে আনতে পারছি না।
সাট আপ! হুংকার ছাড়েন হিরো। বলতে লজ্জা করে না? মেয়েলোক আর মদ নিয়ে পড়ে থাকলে কী দুনিয়া চালান যায়?
লুচ্চার বাপের মিনমিনে গলা। তুইও তো মাগি আর মদ নিয়ে থাকিস, সবগুলো সেকরেটারিই খাসা খাসা, বাছাই করা। লায়ন ট্রেড কথাগুলো মনে মনে আওড়ায়।
কী, কথা বলছ না কেন? মিঃ ফেটু ওরফে মটু। হিরোর তিরস্কার। যে মুরগি যে গু খায়, যে শুয়োর যে কচু অর্থাৎ কাউকে গান পয়েন্টে মানে ভয় দেখিয়ে, কাউকে মানি পয়েন্টে মানে ঘুস দিয়ে, কারোর উইক পয়েন্ট আই মিন নারী, সুরা দিয়ে সাইজ কর। তা না হলে তৃতীয় বিশ্বের নতুন আবিষ্কার গুম তো আছেই। হ্যাল্লো মটু! গুম সম্বন্ধে ভাল করে জানবে। গুম এমনই সুবিধের অস্ত্র, তা হল, ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে নিমেষেই হাওয়ায় মিলিয়ে দেয়া যায়। কে বা কারা করল, কোথায় মিলে গেল, কিভাবে মিলে গেল, কোন হদিস থাকে না। কেস-কাচারি নেই, লাসের মিছিল নেই, দাফন-কাফনের ঝামেলা নেই। হাঃ হাঃ হাঃ। এসব যে আমাদের ইন্টেলিজেন্সকেও হার মানিয়েছে। নাও মিটিং ইজ এডজন। গেট লস্ট এভরিবডি। প্রায় ধমকে উঠেন তিনি। ও হ্যা, ছ’মাস সময় দিলাম, যে পঞ্চাশটি দেশ বিগড়ে আছে ওদের খাদ্য সাহায্য বন্ধ করে দাও, ঋণ দিও না, মধ্যপ্রাচ্যের তেল সরবরাহকারিদের তেলের দাম বাড়িয়ে দিতে বল। মাথা ঠাণ্ডা করে কাজ কর। আর একশ বায়ান্ন বাসটার্ড এর কড়া নজর রাখ। গো এহেড। বেস্ট অব লাক………। এরপর একটি দ্বীপের ছবি ভেসে উঠে- দ্বীপটির চারপাশে নীল সমুদ্র। বাড়ি-ঘর সব বিধস্ত। একটা লোকের চিহ্ন নাই। সনমের মনে নানা পরিবর্তন আসছে। সে ভাবছে প্রথম বিশ্বের এসব দেশ যত শক্তিশালী, তাদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করতে যাওয়ার চেষ্টা করা আমাদের বৃথা…। কোন সুপার পাওয়ারের সাহায্য ছাড়া সফলকাম হওয়া সম্ভব নয়। ইস একটা সুপার পাওয়ার যদি আমাদের সাহয্যে এগিয়ে আসত…। সে এসব ভাবতে ভাবতে ক্লান্তির শীতল পরশে সাগরের নীল দেখে দেখে ঘুমিয়ে যায়। কেউ বোধ হয় তাকে খেয়ালই করে নি। সবাই যেন কোন এক দুঃস্বপ্নের হতাশায় ডুবে গেছে…
হিরো সবাইকে নিয়ে ফলোআপ মিটিং এ বসেছেন। লায়ন ট্রেড এর মুখ কাল, ভার।
ড্যাসিং হিরো রুক্ষ কণ্ঠে বলেন, লায়ন খবর বল।
লায়ন মাথা নিচু করে, একশ বায়ান্ন হারামখোড় লাপাত্তা।
হোয়াট! এই ইন্দুরের বাচ্চা! তোরে লায়ন নাম রাখছে কে? পরক্ষণেই ঘাড় ঘুরিয়ে, ওই লিজার্ড ম্যাক্স টিকটিকির গুষ্টি, খালি ল্যাজ নাড়স, কোথায় গেল হারামখোরগুলো?
লিজার্ড ম্যাক্স কথা বলতে যেয়ে মুখ আটকে গেল। তার গলা নড়ে-চড়ে শব্দ বেরুল টিক টিক টিক। তারপর মেয়েলি কণ্ঠে বলে, চাঁদের দেশে।
চাঁদ! ওটা তো আমাদের দখলে। ষাটের দশকে জয় করেছি। একমাত্র আমাদের দেশের স্পেস সাটল সেখানে যেতে পারে। তয় কী ওই জানোয়ারদের পাখা গজিয়েছিল? ঠিক করে বল, ওদের ভিসা দিল কে, টিকিট পেল কোথায়? স্পেস সাটলে উঠল কিভাবে?
ড্যাসিং হিরো, অভয় দিলে বলতে পারি।
তো এতক্ষণ চুপ করে আছ কেন? বল বল বল, তাড়াতাড়ি কর। হিরোর অধৈর্য হবার দশা হয়।
ঠিকই বলেছেন শ্রদ্ধেয় হিরো। আমাদের দেশের মহাকাশ যানেই গিয়েছে। কিছু অসাধু কর্মকর্তা ঘুষ খেয়ে একাজ করেছে।
কীহ! কোন সেসব কর্মকর্তা? তাদের ফায়ারিং স্কোয়ার্ডে দাও।
ফক্স মার্ক লাফিয়ে উঠে। সর্বনাশ! শান্ত হোন প্রিয় হিরো। আমাদের জাতিকে কলঙ্কিত করা যাবে না। এদের দেহে ব্লু-ব্লাড। হয়ত ভুলে-ভালে ব্লাডে একটু স্পট পড়েছে। ডায়ালাইসিস করলেই শুধরে যাবে। আপাততঃ ছুটিতে পাঠান হোক। তারপর সাময়িক বরখাস্ত। পরে না হয় দেখা যাবে।
তা না হয় হল। হিরো গর্জে উঠেন, এক্ষুণি স্পেস সাটল প্রস্তুত কর। ড্রোন পাঠাও, ড্রোন। সঙ্গে এক স্কোয়াড্রোন জঙ্গি বিমান। মিসাইল, রকেট লঞ্চার এবং এক ডিভিশন স্পেসাল ফোর্স নাও। চাঁদের আনাচে-কানাচে, পাহাড়, মালভূমি, নিম্নভূমি তন্ন তন্ন করে খুঁজে শয়তানদের জ্যান্ত বা মৃত ধরে আন। যাও, গো…। তার চিৎকার হল্রুমে প্রতিধ্বনি হতে থাকে। শুনে রাখ, এ অপারেশনের নাম ‘অপারেশন ক্লিন বাসটার্ড’।
এক মাস পর খবর আসে, অপারেশন ক্লিন বাসটার্ড ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছে। একশ বায়ান্নজনই চাঁদের দেশ থেকে পালিয়েছে।
ড্যাসিং হিরো আবারও জরুরি মিটিং-এ বসেছেন। তিনি লিজার্ড ম্যাক্সকে প্রশ্ন করেন, শয়তানগুলো কিভাবে পালিয়ে মঙ্গলগ্রহে গেল? ওটাও তো আমাদের নিয়ন্ত্রণে। দীর্ঘদিন থেকে তো আমরাই নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছি। সেখানে যাওয়া আমাদের ছাড়া কারোর পক্ষে সম্ভব নয়। আর গিয়েছেই যখন তখন তোমরা বসে কী মাতারিদের গু সাফ করছ? পাত্তা লাগাচ্ছ না কেন?
লিজার্ড উঠে দাঁড়ায়। তার মুখ শুকনো। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে, ড্যাসিং হিরো! টিক টিক টিক, অনেকটা সেরকমই।
কিহ, আমার সাথে ইয়ার্কি মার?
না মানে গোস্তাকি মাফ হয় জাহাপানা! ইবলিশগুলো চাঁদ থেকে মঙ্গলে গিয়েছে এক ভিন গ্রহের চক্রের মাধ্যমে। আমাদের ট্রুপার যখন চাঁদে পৌঁছান পৌঁছান ভাব ঠিক তখন একটি দ্রুতযান চাঁদ থেকে মঙ্গলগ্রহের দিক উড়ে যাচ্ছিল। তাদের আমরা ধাওয়া করেছিলাম কিন্তু তাদের গতি ছিল আমাদের রকেটের চেয়ে কয়েকগুন বেশি। ফলে তাদের নাগাল পাওয়া যায়নি। তারা চাঁদে একটি চিঠি ফেলে গিয়েছে। চিঠিটা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে যা জানা গেছে, পৃথিবীর কোন কম্পানি এধরনের কাগজ বানাতে পারে না। এ কাগজ ছেঁড়া যায় না, পোড়ে না, পানিতে নষ্ট হয় না। এমনকি একুয়া রেজিয়াতেও ডিজল্ভ হয় না। কাগজের রাসায়নিক সংকেত এ্যানালাইসিস করতে যেয়ে নতুন কিছু অজানা মৌলের সন্ধান মিলেছে। এর উপর যে লেখা তা পৃথিবীর কোন কার্বন কম্পাউন্ড দিয়ে লেখা নয়। কোন ক্যামিক্যাল দিয়ে এ লেখা ভ্যানিস করা যায় না। ছাপার যন্ত্রও মনে হয় অত্যাধুনিক। ইংরেজিতে লেখা এ চিঠি নির্ভুল বলিষ্ঠ বর্ণনা। ওরা নিশ্চয় কোন ভিনগ্রহের। যারা আমাদের চেয়ে হাজার গুন উন্নত। এবং চিঠির ম্যাসেজও ভয়ানক।
স্টপ ইট ননসেন্স! ভয়ানক! না? ভয়ানক! চিৎকার দিয়ে মাথার চুল ছেঁড়ার মত টানতে টানতে ড্যাসিং হিরো উঠে দাঁড়িয়ে ঘুরেই টেবিলের উপর ধারাম করে মুষ্টাঘাত করেন। দুনিয়ার সবচেয়ে দবরদস্ত পরাক্রমশালীর গোল টেবিল ভূমিকম্পেরমত কেঁপে ওঠে। সেই সাথে কম্পিত হয় বিশ্বজাহানের নেতৃবৃন্দ। তারা পরস্পরের দিকে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে। তিনি রাজসিংহাসন ঝাঁকুনি দিতে দিতে বলেন, সেটা কী, বলছ না কেন? বল।
লিজার্ড ম্যাক্স ওরফে শুটকু ওরফে টিকটিকি বাহাদুরের হাতে চিঠি কাঁপছে। কম্পিত কণ্ঠে কথার বদলে টিক টিক টিক বা কখনও পিক পিক পিক আওয়াজ হতে থাকে।
বিশ্বনেতার চক্ষু রক্তের মত লাল, বড় বড়।
সেটার দিকে চোখ পড়তেই টিকটিকির তিরিক করে খানিক হিসি বেরিয়ে যায়। দ্রুত পকেট থেকে টিসুু বের করে সেটা কোন মতে সামাল দিয়ে পড়তে থাকেÑ
পারুখা বিশ্ব নেতা,
তোমাদের ঐ বসুন্ধরাটা খুব সুন্দর। আমাদেরটার চেয়েও। তোমাদের প্রকৃতিতে জীব ও জড় আছে। জীবের মধ্যে প্রাণী ও উদ্ভিদ আছে। নদী পাহাড় সাগর আকাশ মেঘমালা সব জড়। সব কিছু মিলে নারীরমত। সবচেয়ে ভালো হয় যদি বল এ ‘মাটি’ মায়ের মতো। একটু চেষ্টা করলে এটা আরও সুন্দর করে সাজান যায়। অথচ তোমরা দখলবাজীতে মেতে উঠেছ। একে ধ্বংস করছ, ধর্ষণ করছ। খুব সাবধান! সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন তোমাদের মড়লগিরি খতম হয়ে যাবে…।
ইতি,
ভিনগ্রহী।

লাইট জ্বলে উঠার সাথে সাথে মৃদু গুঞ্জন উঠে। সনমের স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়, চোখ রগড়াতে থাকে। সিরাজ জিন্নাত তার কাছে এসে দাঁড়ান। তিনি সনমের পিঠে হাত রেখে বলেন, এনিথিং রং?
সনমের চোখ ঝাপসা। তার ঘোর তখনও কাটেনি। সে ঢোক গেলে, স্যার, সর্বনাশ! ওরা খুব ভয়ানক! ওরা চাঁদ এমনকি মঙ্গল গ্রহও দখল করে ফেলেছে! কিন্তু ভিনগ্রহের সুপারপাওয়ার আমাদের সাথে আছে। ওরা আমাদের রক্ষা করবে…।
সিরাজ জিন্নাত হঠাৎ বিকট শব্দে হাঃ হাঃ হাঃ করে হেসে উঠেন, স্বপ্ন আর বাস্তবতা কী এক?
সুমিত অন্ধকারেই লক্ষ্য করে সনমের মুষ্টিবদ্ধ হাত যদিও একটু আগে কিছু একটা হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার ভয়ে সে কাঁপছিল…।

(Visited 8 times, 1 visits today)

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *