জহির একটা – আখতার জামান

শেয়ার করুন

আখতার জামানঃ গোসলের মাঝপর্যায়ে ট্যাপ থেকে হঠাৎ পানি পরা বন্ধ হয়ে গেল। ট্যাপটা ভালোভাবে ঘুরালাম, কাজ হলো না। টিপটিপ করে কয়েক ফোঁটা পড়ল। হাতের তালুতে সেটুকু ধরে চোখের দিকে ঝাপটা মারলাম। মেজাজ বিগড়ে যাওয়ার মহূর্ত। বাথরুমের দরজাটা ফাঁক করে গলা বাড়িয়ে কাজের বুয়াকে বললাম, বাড়িওয়ালাকে মটর ছাড়তে বল। কাজের বুয়া কথাটা আমলে নিল বলে মনে হলো না। সে বারান্দায় বসে ডাঁটার শাক বাচছে। লকলকে ডাঁটার শরীর থেকে পাতাগুলো আহ্লাদিত ভঙ্গিতে ছিঁড়ে পাশের বাসনে রাখছে। কাজটা গুরুত্বপূর্ণ ধরনের কিছু না। অথচ তার ভাবভঙ্গি এমন যে মহা জটিল কাজের মধ্যে আছে। সে আমার দিকে হাসি হাসি মুখ নিয়ে তাকিয়ে পাতা ছেঁড়ার কাজে মনোযোগ দিলো। আমার শরীরের অর্ধেকটা ভেজা। মাথায় শ্যাম্পু মাখানো। শ্যাম্পুর ফেনা চোখের মধ্যে ঢুকে পরায় বেশ জ্বালা করছে। শেষ পানি ঝাপটায় খুব বেশি কাজ দিয়েছে বলে মনে হয় না। বড় একটা প্লাস্টিকের বালতি রাখা আছে বাথরুমে। বালতিও খালি। খুব সম্ভব বালতির পানি খরচ করে ইতোমধ্যে আমার স্ত্রী গোসল সেরে নিয়েছে। তার শরীর স্থুলকায়। পানি বেশি লাগে। সময়ও। গোছলের সময় সে মৃদুস্বরে সংগীত চর্চা করে থাকে। সাত সকালে বাথরুমের তার এই সংগীত প্রতিভা আমাকে অতি যন্ত্রণার মধ্যে উপভোগ করতে হয়। আজও করতে হয়েছে। সকাল থেকেই পেটের ভেতর খানিক মচড়ামচড়ির আভাস পাচ্ছিলাম। বেগতিক অবস্থায় তাকে বেশ ডাকাডাকি করে বের করতে হয়েছে। এই অবস্থায় বেশ চিৎকার দিয়ে তখনকার মতো করে ডাকলাম স্ত্রীকে। স্ত্রী ধীর পায়ে এলো। ঠাণ্ডা গলায় বলল, চেঁচাচ্ছ কেন?
বললাম, শালার পানি নাই। দেখতিছ না? বুয়াকে বলো, মটরটা ছেড়ে দিয়ে আসুক!
স্ত্রী খানিক কড়া গলায় উত্তর দিল, বিদ্যুৎ নাই। মটর চলবে কি তোমার মাথা দিয়া?
রাগে একটা বকা দিলাম। ঠিক স্ত্রীকে না। বিদ্যুতকে। বিদ্যুৎ বিভাগে আমার নিকট আত্মীয় স্বজন নেই। এ কারণে বকাঝকাতে আমি বেপোরোয়া। বিদ্যুৎ বিভাগের আমলা-মন্ত্রি কেউ বাদ যায় না। বকে শান্তি পাই। আমার স্ত্রী তীক্ষèভাবে তাকাল। সে বকাবকির শব্দগুলো বেশ মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করেছে। শুধু খেয়ালই না শব্দটার উপর তার পূর্ব থেকেই যে বেশ বিদ্বেষ ভাবনা ছিলÑ তা কিঞ্চিত উপলব্ধি করলাম। এবং প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটা সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়ার মতো সেও ঝাঁঝাল গলায় কি যেন বলল তারও ঠিক অর্থ পরিষ্কার না। ‘উল্লুক কা পাঠা’ ধরনের। শব্দটা হিন্দি এক সিনেমার। আমার স্ত্রীর হিন্দি ভাষার উপর বেশ ভালো দখল আছে। স্টার প্লাস না কি সব চ্যানেল দেখে দেখে এসব গুনাবলি অর্জন করে করেছে। সাত সকালে চোখে শ্যাম্পুর জ্বালা পোঁড়া নিয়ে স্ত্রীর কাছ থেকে হিন্দি শব্দে গালিগালাজ শুনতে কোনো পুরুষেরই ভাল লাগার কথা না। আমারও ভাল লাগল না। চুপ করে রইলাম। বাইরে চুপ কিন্তু মনে মনে বকা দিলাম।
তুমি একটা হুল্লুক। তোমার বাপ আমজাদ ব্যাপারী একটা হুল্লুক। হুল্লুক না হলে এইভাবে আমাকে ঠকায়? ধামরি একটা মেয়েকে আমার গলায় বিনা পয়সায় ঝুলিয়ে দিয়েছে! তোমার চোদ্দগুষ্ঠি হুল্লুক কা পাঁঠা। শুধু পাঁঠা না হুল্লুক কা খাসি। হুল্লুক কা ছাগল…।
মনে মনে বলা কথাও বুঝি স্ত্রীলোক বুঝতে পারে। রান্নাঘরের ধরা পানি দিতে দিতে সে উচ্চস্বরে যেসব কথাবার্তা বলল তা হজম করা আমার জন্য কঠিন। আমি হজম করার জন্য প্রস্তুত নই। অতএব দুই একটা অপবাক্য ছাড়লাম।
কাজের বুয়া ডাঁটার শাক ছিঁড়তে ছিঁড়তে আমাদের সকালের মধুর সম্পর্কের বাক্যবিনিময় শুনছে। হাসছে দাঁত বের করে। পাশের রুম থেকে বড় ছেলে শব্দ করে পড়া করছে। ছেলেটার গলার স্বর ভেঙ্গে গেছে। বয়োসন্ধি কাল। এ সময় গলার আইসিতে প্রবলেম দেখা দেয়। মেয়েলি কন্ঠের নাটকীয় বিদায় ঘটে। বড় ছেলে অদ্ভুত কন্ঠে চেঁচিয়ে যাচ্ছে। বিশ্রি শোনাচ্ছে। স্ত্রী রান্নাঘরের হলুদ মরিচের সামান্য গন্ধযুক্ত নোংরা পানির ব্যবস্থা করে দিয়ে গেলো। সেই পানি মাথায় ঢাললাম।
চোখের জ্বালাপোড়াটা কমছে না। মনে হল বাড়ছে। চোখে কি তবে মরিচগুড়া ধরনের কিছু ঢুকে পড়েছে?
অফিসে ঢুকে পত্রিকা নিয়ে বসলাম। দিনের শুরুতে দেশের প্রধান প্রধান খবর না জানলে খারাপ লাগে। টেবিলের উপর রাখা পত্রিকায় চোখ ফেলতেই শরীর জ্বলে উঠল। এসব কি লিখছে?
নদীতে বাঁধ দিয়ে ভরাট করে নিচ্ছে এক শ্রেণীর মানুষ। শেয়ার বাজার কারসাজি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা মাথায় হাত দিয়ে পথে বসেছে। লিবিয়ায় নির্বিচারে খুন হচ্ছে মানুষ। আফগানে বোমা বর্ষন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জোর দাবি করে বলেছেন যে ইরাক যুদ্ধ শেষে সেখানকার মানুষ শান্তিতে আছে। জাতিসংঘের প্রেসিডেন্ট বান কি মুন পুনঃনির্বাচিত।
খবরগুলো পড়েই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। মুখ ফসকে একটা অপ্রয়োজনীয় শব্দ বেরিয়ে গেল। শব্দটা নতুন এসেছে। কিভাবে যেন আমার মুখে মানিয়ে গেছে বুঝতে পারছি না। শব্দটা উচ্চারণ করার সাথে সাথেই নিজেকে সামলে নিলাম। একি বললাম আমি ! বান কি মুনের প্রতি এতো বিদ্বেষ থাকাটা ঠিক না।
পাশের টেবিলের কুদ্দুস সাহেব আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে কী যেন ভাবছেন। আমার কিছুটা লজ্জা লাগলো। এ ধরনের শব্দ মুখে আনা ঠিক না! পরিবেশ নষ্ট হয়।
ঠিক করলাম এ ধরনের অপশব্দগুলো মুখে আনব না, যতদূর পারা যায় মনে মনে প্রয়োগ করে যাব। মনের কথাতো আর কেউ শুনতে পারবে না?
এলাকার পুঁচকে ছাত্রনেতা এসে আমার টেবিলের সামনে চেয়ার টেনে বসল। সিগারেট ধরাল। ধোঁয়া ছাড়ল মাথা চারপাশ ঘুরিয়ে। এই ছেলেটা বেশ বিরক্ত করে যাচ্ছে কিছু দিন হল। ফেনসিডিল না কি সব হাবিজাবি জিনিস খায়। টাকার জন্য আসে। প্রথমে ভদ্রভাবে চায়, না দিলে উল্টাপাল্টা কথা বলে। খিস্তি করে। টাকা দিতে হয়। উপরি থেকে টাকাটা ছাড়ি। এই অফিসে উপরি ইনকামের ব্যবস্থা আছে। এই ইনকাম সবার জন্য বাধ্যতামূলক।
আমাদের অফিসের বস কড়া শ্রেণীর মানুষ। উপরির বণ্টনবিধি তার নিজের করা। তার বিধি অগ্রাহ্য করা মানে চাকরি নট। কিংবা বান্দরবন পোস্টিং।
বান্দরবন চাকরি করার মনোবৃত্তি না থাকার কারণে আমিও উপরি অংশের ভাগিদার।
মাসের বিভিন্ন সময়ে দফায় দফায় টাকাটা আসে। এটা এখন এ অফিসের নিয়ম। টা বি কা অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে কাজ। তাই চুপচাপ কাজ করে যাই। বস অফিসের যত দুই নম্বরী কাজ আমাকে আর কুদ্দুস সাহেবকে দিয়ে করান। আমার খারাপ লাগে। নিজেকে ছোট মনে হয়। ছোট ছোট মানুষদের সাথে কাজ করতে গেলে খানিকটা বামুন টাইপেরতো হতে হবে। কুদ্দুস সাহেবের খারাপ লাগে কিনা জানি না। কুদ্দুস সাহেব বিশেষ ভদ্র শ্রেণীর মানুষ। তিনি খুব মিষ্টি করে কথা বলেন। বসের বিশেষ স্নেহ দৃষ্টি তার উপর। শুনেছি, সেই স্নেহদৃষ্টির মধ্যে নারী ঘটিত ব্যাপার স্যাপার রয়েছে। এই কুদ্দুস সাহেবের দিকে তাকালে আমার মনের ভেতর সে কথাটা চলে আসে। আমি মনে মনে তাকে একটা বকা দেই। শালা বান কি মুন।
বকা দিলে মন শান্তি পায়। প্রকাশ্যে কিছূ বলা যায় না যাদের, তাদের জন্যে মনে মনে বলা। মনে মনে ঘৃণা করা। মনে মনে ঘৃণা করা ঈমানের সর্বশেষ ধাপ। পাপকে প্রতিরোধ কর আর যদি না পার তবে প্রতিবাদ করো আর তাও যদি না পার তবে মনে মনে ঘৃণা কর। ধর্ম গ্রন্থের কথা।
আমি মনে মনে গালমন্দ করি। এতে আমার মন বেশ আরাম পায়। শান্তি ভাব চলে আসে।
এখন আমি পুঁচকে ছাত্রনেতার দিকে তাকিয়ে মনে মনে শক্ত একটা গালি দিলাম। গালিটা খুবই অম্লীল। ছেলেটা শুনতে পেলে আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ত।
ও আমার দিকে ঝুঁকে বলল, স্যার, আইজ কিছু দিয়েন। আমি হাসি মুখে বললাম, আচ্ছা যাও, এখন না পরে। আর মনে মনে বললাম, এই শুয়োর, তোর… মধ্যে টাকা ঢুকিয়ে দেয়ার দরকার। শালা। বদজাত।
ছেলেটা বিনয়ের ভঙ্গিতে উঠে গেল এবং এর পরই হঠাৎ আমার মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল শেষের শব্দ। শালা। বদজাত।
কুদ্দুস সাহেব এবার আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসলেন। গালিটা তার পছন্দ হয়েছে।
আচ্ছা, উনিও কী মনে মনে গালি দেন? এবার তার দিকে তাকিয়ে লেটেস্ট আয়ত্বে আসা গালিটা নিঃশব্দে প্রয়োগ করলাম। কুদ্দুস সাহেব নিজ কাজে আত্মনিবেশ করলেন। খানিক মাথা ঝাকালেন আনমনে। তাহলে কি উনি মনে মনে আমার মতো কিছু একটা বলছেন।
উনি হয়ত গালি-গালাজের মধ্যে নেই। অতিরিক্ত ভদ্র চেহারার মানুষ। মুখে কখনোই আজে-বাজে শব্দ শোনা যায় নি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। তস্বি টানেন। তস্বি হাতের মানুষের মন থাকে পরিষ্কার। তারা আল্লাহ-রাসুলের নাম ডাকা ছাড়া আর কিছু ভাবেন না। তাছাড়া অশ্লীল শব্দ মুখে ও মনে আনলে মুখে ও মনের বরকত নষ্ট হয়ে যায়। ধর্মের কথা।
মনের বরকত কমে যাচ্ছে জানার পরও মনে মনে বকাঝকার অভ্যাসটা যাচ্ছে না। ছিঃ।
বসের ডাক পেলাম। বসের ডাক পেলেই বুকের ভেতর ধুক ধুক করে ওঠে। বুকের ধুক ধুক ব্যাপারটা আমার আর গেল না।
বসের এসি রুম। ঠাণ্ডা হাওয়ায় শরীর জুড়ে যায়। রুমের ভেতর ঢুকেই লম্বা একটা সালাম দিলাম। বস আমাকে চোখের ইশারায় বসতে বললেন। তিনি টেলিফোনে কার সাথে যেন নরম ভাষায় কথা বলছেন। খুব আহ্লাদিত মনে হচ্ছে। অতিরিক্ত আহ্লাদের কারণে কণ্ঠের মধ্যে কিছুটা মেয়েলি ভাব চলে এসেছে তার।
আমি চেয়ারে বসে তার দিকে যথাসম্ভব মায়াভাব চোখ মেলে তাকিয়ে রইলাম। তিনি আমার দিকে প্রসন্ন চিত্তে তাকালেন। হাসি বিনিময় হলো। তারপর মনোযোগ দিলেন টেলিফোন লাইনে। বসের কন্ঠস্বর মেপে নিশ্চিত যে ওপাশে কোন মহিলা লাইনে আছে।
মনে মনে রাগ হতে লাগল। মনের মধ্যে রাগ হলেই মনের ভেতর যে কণ্ঠ সেটা খুলে যায়। মন কথা বলা শুরু করে। ইদানীং মন ভালো কথা খুঁজে পাচ্ছে না। শুধুই…।
আমি ক্রমাগত নিঃশব্দে বলছি। এই শালা বাইন চোত, এত কথা কিসের? অ্যাঁ?
বস কথা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফাঁকেফাঁকে হাসি মুখে আমার দিকে তাকাচ্ছেন। আমি হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে তার আনন্দ উপভোগ করছি। আর বকা দিচ্ছি মনে মনে। এভাবে টানা পঁচিশ মিনিট।
তারপর তার কথা শেষ হল।
তিনি এবার আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে বললেন, কেমন আছেন জামান সাহেব?
আমি দ্রুত বললাম, জ্বী স্যার ভাল।
বস শুনলো বলে মনে হল না, তিনি টেবিলের সামনে খুলে রাখা ফাইলের দিকে তাকালেন। আমি এই সুযোগে মনে মনে বললাম, ওরে শালার পুত শালা! বদমাশ। লম্পট। আমার ভালো দিয়া তোর কী? কাজের কথা ক’…।
বস ফাইল থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে তাকালেন। আমার বুকটা ধক করে উঠল। শুনতে পায় নি তো? শব্দ করে বললেন, আলী আক্কাস সাহেবের ফাইলটা কি আপনি করেছেন?
আমি তাৎক্ষনিক বিনয়ের সাথে বললাম, জ্বী স্যার। আর মনে মনে বললাম, তুই জানিস না শালার পুত শালা, আমি ছাড়া কে করবে?
বস এবার ফাইল সংক্রান্ত দীর্ঘ বক্তৃতা ঝারলেন। জানেন জামান সাহেব, আমার মতো এত যোগ্য, উদার অফিসার আমাদের এই ডিপার্টমেন্টে একটাও পাবেন না। অথচ দেশটার কথা আর কি বলব, যোগ্য লোকের উপযুক্ত মূল্যায়ন এদেশে কিন্তু হয় না। আপনি দেখেন, কত অযোগ্য লোকদের হেড অফিসে বসিয়ে রেখেছে। ভাবা যায়…!
আমি বসের কথা অতি মনোযোগ দিয়ে শোনার ভঙ্গি করছি আর মনে মনে বলছি, তোর মতো ইতর দেশে খুব বেশি নাই। তোর পোস্টিং হওয়ার দরকার ঢাকা চিড়িয়াখানায়। চিড়িয়াখানার বানরদের খাঁচায়। বানরদের সাথে নাচানাচি করবি, পাবলিক দেখবে।
বস তার কথা চালিয়ে যাচ্ছেন। আজ তার মুড ভালো। ভালো মুডে সে কথা না বলে থাকতে পারেন না। ইদানীং তার সব গল্প এসে মেশে প্রতিমন্ত্রির সাথে সম্পর্ক জানাজানির গল্পটির মধ্য দিয়ে।
সে এক আজব ব্যাপার, কী হলো জানেন? প্রতিমন্ত্রী যে আমার নিকট আত্মীয় আমার জানাই ছিলো না। আমার শ্বশুর বাড়ির দিক থেকে। আমার চাচা শ্বশুরের বাড়িতে ছিলো দাওয়াত। দাওয়াত খেতে গেছি। দেখি দুই গাড়ি পুলিশ। বলি ঘটনা কী? তারপর তো আমিই বেকুব হয়ে গেলাম। এত নিকট আত্মীয় আমাদের মধ্যে আমিই খোঁজ রাখিনি। আমার চাচা শ্বশুর এসে আমাকে পরিচয় করে দিলো…।
আমি বসের কথা শুনছি আর জবাব দিচ্ছি মনে মনে। আরে তুই বেকুব না তো কী? তুই হলি মহা বেকুব। এই একই গল্প কত বার করলি খেয়াল আছে? শালা বেকুবের বাচ্চা বেকুব…।
বস প্রতিমন্ত্রির গল্প করেই যাচ্ছেন। আমি মাথা নেড়ে তাকে উৎসাহ উদ্দিপনা দিয়ে যাচ্ছি। বিশ্মিত হওয়ার অভিনয় করছি। গর্বিত হওয়ার ভান করছি। আর মনে মনে বকে যাচ্ছি। বস বলছেন আমিও বকছি। হঠাৎ মুখ ফসকে একটা বিশ্রি শব্দ বের হয়ে গেল। হঠাৎই। বস কথা বলা থামিয়ে গম্ভীর হয়ে রইলেন। কোনো কথা নেই তার মুখে। আমারও। তারপর বেশ রাগি গলায় উচ্চস্বরে বললেন, কিছু বললেন যেন?
আমি হাসতে হাসতে বললাম, স্যার আপনাকে কিছু বলি নাই। আমি বলছিলাম…।
কাকে বলছিলেন?
স্যার জহিরকে।
জহিরটা কে?
স্যার জহির একটা কুত্তার বাচ্চা। শুয়োরের বাচ্চা…।
আহা! ও এখানে আসছে কেন?
স্যার, জহির আসে। মাঝে মাঝেই আসে।
বস ভ্রু কুঁচকালেন। চিন্তিত দেখাচ্ছে তাকে। তারপর ঠান্ডা গলায় বললেন, জহির আসলে কে?
আমি ঝটপট বলে ফেললাম, স্যার , ও আসলে একটা কুত্তার বাচ্চা..শুয়োরের বাচ্চা।
বস বেশ শব্দ করে বললেন, আচ্ছা, আপনি যান! ওর কথা শুনতে ভালো লাগছে না…।

(Visited 8 times, 1 visits today)

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *