কবি এনামুল হক টগর এর এক গুচ্ছ কবিতা

শেয়ার করুন

১। এই বাংলায়

আমি তোমাদের মাঝে বার বার ফিরে ফিরে আসি নতুন!

এই বাংলায় আমি মৃত্তিকার মাঠে মাঠে কখনো কৃষাণ কখনো কৃষাণি ফসল ফলাই নন্দন।

এই বাংলায় আমি কখনো শ্রমজীবী কখনো কর্মজীবী কখনো অভিজ্ঞ নির্মাণে আবিষ্কার নিপুণ।

এই বাংলায় আমি সময়ের প্রয়োজনে কখনো আধুনিক কখনো দৃঢ় দীপ্ত আলোতে সুন্দর।

এই বাংলায় আমি কখনো ঘরে ঘরে কখনো গ্রামে ও নগরে প্রাণের অধিকার জাগাই সাম্য দীপ্ত।

এই বাংলায় আমি মানবতার বার্তা নিয়ে সভ্যতার জ্ঞান ছড়াই আর্দশ সমাজ শান্তি।

এই বাংলায় আমি কখনো অধ্যয়নরত ছাত্র ছাত্রী গবেষণায় কল্যাণ আনি চিকিৎসা আগামীর ।

এই বাংলায় আমি কখনো কখনো খেটে খাওয়া মানুষের, কখনো কখনো দিনমজুরের বন্ধু সমান অধিকার।

এই বাংলায় এই জন্মভূমি,এই মাতৃভূমি,এই মৃত্তিকার পথে পথে আমি কখনো সূর্য পিণ্ড আলোতে সুদূর।

এই বাংলার চেতনায়,আমি কখনো সত্যজ্ঞানের কিরণ ছড়াই জনম জনম মানবতার প্রেম।

এই বাংলার অধিকারে আমি কখনো আন্দোলন ও মিছিলে ন্যায্য দাবী সম্পদ বণ্টন দেশপ্রেম।

এই বাংলায় আমি মুহূর্তে মুহূর্তে জেগে উঠি দৃঢ় দীপ্ত লড়াইয়ে দেশপ্রেম জাগরণ সুগতি।

এই বাংলার আমি আঁধারের গভীর ভেঙে তছনছ করি সন্ত্রাস দূর্নীতি লুটেরা মাদক মাতাল।

এই বাংলায় আমি জনপদ ও রাজপথের গলিতে গলিতে শ্লোগান করি উন্নতির সুচনায় সমুজ্জ্বল।

এই বাংলায় আমি পরিবর্তন ও মানবতার আদর্শ নীতি দৃঢ় দীপ্ত জীবনের চলমান অগ্ৰদূত।

এই বাংলায় আমি আহত বিক্ষত যন্ত্রণার কবি নিত্য ইতিহাস লিখি জীবনের ব্যথা মুক্ত স্মৃতি।

এই বাংলায় আমি ন্যায়পরায়ণ যুদ্ধে যুদ্ধে শহীদদের তালিকায় বিপ্লবী বীর ও তীক্ষ্ণ তরবারি।

এই বাংলায় আমি অসহায় মানুষের পক্ষে হেঁটে যাই নগরের অধিকার আন্দোলন মুক্তির।

এই বাংলায় আমি শহীদ মিনার ও মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ মাইলফলক স্মৃতিশৌধ দীপ্তকর।

এই বাংলায় আমি ইতিহাসের মহাযোদ্ধা দক্ষ রাজনীতিবিদ মহাকালের আলো আঁধার!

এই বাংলায় আমি যুগে যুগে,আমি শতকে শতকে,আমি সহস্র বছরে ধরে নতুন নতুন আবির্ভাব সংস্কার।

এই বাংলায় আমি কঠিন কালের অশুভ অশনি অন্যায় অবিচার ভেঙে চুরে গড়ে তুলি মধুর সংসার।

এই বাংলায় আমি সর্বসময় ব্যভিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই সাহসী এক মহৎ যোদ্ধা অগ্নি নয়ন।

এই বাংলায় আমি নব নব রূপ ও রূপান্তরে মিছিল সংগ্ৰাম করি শ্রম ও কর্মে ন্যায়পরায়ণ।

এই বাংলায় আমি অতীতে মাতৃভাষার আন্দোলনে লড়াই করেছি আজন্ম দেশপ্রেমিক।

এই বাংলায় আমি তরুণ যৌবনে স্বাধীনতার রক্ত ঝরা রণাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধের অখণ্ড বিবেক!

এই বাংলায় আমি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও রাখাল রাজার মহা-দেশপ্রেমে উজ্জীবিত উত্তরসূরী।

এই বাংলায় আমি পুনরায় আরেকটি অর্থনৈতিক যুদ্ধের চেতনায় নতুন সংস্কারের পথে পথে দীপ্তকর।

এই বাংলায় আমি ক্ষুধামুক্তির বার্তা বহনকারী দিন ও রাত্রির বুকে দক্ষ মাঝি কাণ্ডার।

এই বাংলার আমি বরযখ ইল্ল্যীয়ান ও সিজ্জিনের মধ্যবতী রহস্য ইলমে মারফতের ভাণ্ডার।

এই বাংলায় আমি রূহের জগত থেকে ফিরে ফিরে আসি পরিবর্তনের ঘরবাঁধি মানবতার সংসার!

এই বাংলায় ও পৃথিবীতে আমি পুলসিরাতের পথে পথে হেঁটে যাই সরল বিশ্বাসী আগামীর।

এই বাংলায় আমি কালে কালে ও যুগে যুগে শোষিতদের পক্ষে কথা বলি,কখনো থমকে দাঁড়াই অনাগত যুদ্ধের উত্তরসূরী।

এই বাংলায় আমি মানব জাতির স্বনির্ভর বাসনায় বার বার আন্দোলন করি আধুনিক সভ্যতার।

এই বাংলায় আমি সমকালের বিপ্লবী,আমি বিশোধন আলোকপ্রাপ্ত সুফি রাজ্যে নূরের জ্যোতিতে দীপ্তিময়।

এই বাংলায় আমি অসৎ আমলা,কঠিন সন্ত্রাসী ও ভণ্ড রাজনীতিবিদদের রুখে দেই তছনছ সময়।

এই বাংলায় আমি কখনো নিষ্ঠুর নির্মম আঘাতে আঘাতে ধ্বংস করি অশুভ আঁধার।

এই বাংলায় আমি প্রতিরাতে চন্দ্র ও নক্ষত্রের সাথে জেগে উঠি ওই দূর আসমানে বহুদূর দীপ্তময়!

এই বাংলায় আমি ন্যায়পরায়ণ প্রতিঘাত প্রতিরোধে নিহারিকা শিখার মতো জ্বল জ্বল জেগে উঠি জ্বলন্ত শিখায়।

এই বাংলায় আমি রাত শেষে নতুন প্রভাতের সূর্যকিরণ ও বিপ্লবী পাখির ডাকে এক বহমান নদীর তরী!

এই বাংলার থেকে আমি সুদূর পৃথিবীর প্রান্তরে প্রান্তরে হেঁটে যাই কর্ম করি শস্যের উৎপাদনে দৌলত ভাণ্ডার।

এই বাংলায় আমি নব্য সংস্কারক,যেখানেই দেখি অন্যায় মাদক দূর্নীতি সন্ত্রাস কঠিন আঁধার,

সেখানেই আমার নতুন জন্ম,সেখানেই আমি ফিরে আসি,সেখানেই আমি ভেঙে চুরে বন্টন করি মানবতার অধিকার।

এই বাংলায় আমার সাথে জেগে ওঠে নজরুল সুকান্ত জীবনানন্দ শামসুর রাহমান ভবিষ্যৎ সুদূর।

এই বাংলায় আমার সাথে কালে কালে জেগে ওঠে লালন শাহ বিশ্ব কবি রবি ঠাকুর।

এই বাংলায় আমি ত্রিশ লক্ষ শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পবিত্র রক্তে মিশে মিশে বিদগ্ধ দেশপ্রেমিক।

এই বাংলায় আমি অমর ভাষা সৈনিকের দীপ্ত জয়গান রফিক শফিক সালাম বরকত বিবেক।

এই বাংলায় আমি যুদ্ধ শেষে বীরাঙ্গণা বাঁশীর সুরে দেশপ্রেমের গান করি শহীদ জননীর ডাক।

এই বাংলায় আমি কৃষাণ কৃষাণীর রূপ ধরে আবাদের মাটিতে শস্য খামার গড়ি চেতনায়।

এই বাংলায় আমি শতকের পর নতুন শতকে মধুময় রাখালের সুরেলা বাঁশি গীতিকার সুরকার পরিচয়।

এই বাংলায় আমি প্রেমশিখা পরম আনন্দে স্বর্গ শান্তির স্থিতি গড়ি অমৃত সুধা প্রিয়তমার।

এই বাংলায় আমি সাগর পাড়ি দেওয়া অভিজ্ঞ মহাচৈতন্যের এক দক্ষ নাবিক।

এই বাংলায় আমি কর্ম শেষে চলে যাই দূর বহুদূর ওই আসমান ঠিকানায় নিরিবিলি নির্বাক!

এই বাংলায় আমি প্রতিটি ঘাটে ঘাটে ও বন্দরে বন্দরে নোঙর করি দারিদ্রমুক্তির অগ্ৰদূত।

এই বাংলায় আমি বার বার ফিরে ফিরে আসি আদবে গৌরবে শান্তির মহাদূত।

এই বাংলায় আমি বার বার ফিরে ফিরে আসবো সেবায় সভ্যতায় পরিবর্তন নিপুণ।

এই বাংলায় আর এই পৃথিবীর মাঠে মাঠে আমি রূপ রস জন ও সবুজ সোনালী শস্যের রঙে বৈচিত্র্যময়!

এই বাংলায় আমি মধুমতি ভৈরব করতোয়া ধলেশ্বরী ও ইছামতির সৌন্দর্যে ফিরে ফিরে দেশপ্রেম উদয় !

এই বাংলা আমার জন্মভূমি এই বাংলা মাতৃভূমি এই বাংলায় আমি ফিরে ফিরে আসবো নতুন সূর্য আলোময়।

এই বাংলায় আমি সংগ্ৰামী,আমি বিপ্লবী,আমি দেশপ্রেমিক,আমি মহাচেতনায় বাঙালি বিশ্বজগতময়।

২। গোঁড়া

শরীরের গভীরে অজানা ও অন্ধবিশ্বাস ভেদ করে কিভাবে চিনবো সরল সত্য?

প্রতি মুহূর্তে মানুষ গোঁড়ামির ফেতনা ও দ্বন্দ্বে জ্বলে পোড়ে দাউ দাউ বিষণ্ণ বিধ্বস্ত!

সমাজে কতো রক্ত ঝরে,কতো আহত প্রাণের আকুতি বেদনায় ক্ষত বিক্ষত।

সভ্যতার নামে অধিকাংশ মানুষই আঁধারে দিশেহারা মদ্যপতার নেশায় মাতাল!

সাম্যের অধিকারগুলো শুধুই স্বপ্ন দেখায় উদাস ভাবনার দিনগুলো অলস গরল!!

সময়ের প্রবাহে নিষ্পেষিত মানুষগুলো ক্ষুধার জ্বালায় কাঁদে ক্লান্ত অসহায়!

নগরের বুকে বেকার যুবক অভাব অনটনে হাঁটে যায় ক্ষত বিক্ষত সংসার চিন্তায়।

নিত্য জীবনগুলো কোলাহল করে কর্মহীন ব্যর্থ সময় অশান্ত স্বপ্নের বাসনায়।

কালো বিত্তবানদের মৃত হৃদয়ে মানবতাহীন ঘাতক বাস করে বধির তাদের কর্ণ!

সে ভাষার শব্দ ব্যাখ্যা অসহায়রা বোঝেনা না,শুধু ব্যথিত হয় দেশপ্রেম নয়ন।

দেশপ্রেমিকের অন্তরে কাঁদে অনাহারীর বিপন্ন বেদনা ও আর্তনাদের ধ্বনি।

তৃষ্ণার্ত যন্ত্রণার বুকে করুন হাহাকার গরিবরা কাঁদে ও লুটেরারা হাসে জীর্ণ অশনি।

পৃথিবীর ব্যথিত গ্ৰাম,ব্যথিত নগর,ব্যথিত সমাজ ও দেশগুলো কাঁদে দুঃখ কষ্টে বিষণ্ণ।

সত্য সাহসী জীবনগুলো প্রাচীন আঁধারের বুকে স্বপ্ন দেখে বিপন্ন প্রাণের আকুতি মরণ।

এসো মানবতার বন্ধু,এসো সাম্যের সংগ্ৰামী সাথী,এসো ন্যায়-পরায়ণ বিপ্লবী।

এসো সমতার স্বপ্নবান দুটি চোখে ক্ষুধামুক্তির চেতনা আনি আবাদের খামারে শস্য সজিব।

এসো বিজ্ঞ জাতি,এসো অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ,এসো দেশপ্রেমিক বীর সাহসী।

কালের ঘাতক দালাল ও গোঁড়ামির আন্ধবিশ্বাস ভেঙে আলো আনি দৃঢ় বিশ্বাস।

এসো নতুন কল্যাণের কর্মে যুদ্ধ করি নব নব আবিষ্কার পণ্য উৎপাদন নিপুণ।

এই আকাশ,এই বাতাস,এই চন্দ্র সূর্য গ্রহ নক্ষত্র জেনে যাক দিকে দিকে জ্ঞানের নন্দন!

জীবন যুদ্ধ শেষে উজ্জ্বল দিনের আলোতে মানুষ জেগে উঠুক শান্তিময় কল্যাণে নতুন।

অসত্য অন্ধ সে এক আলোহীন আমিত্ব,সত্যজ্ঞান বিশ্বাস আনে সমাগত নিপুণ নির্মাণ!

গবেষণা আর বাস্তবতার আলিঙ্গনেই মানবতার বৃহৎ মিলন ও শান্তির মহাচৈতন্য মহাবন্ধন।

সেই জ্ঞানের আলোতেই মৃত্তিকার বুকে গোঁড়া আঁধার ভেঙে নতুন ফসল জেগে উঠুক সৌরভ চন্দন।

৩। ভালোবাসার পৃথিবী

এই পৃথিবীর বুকেই আমার প্রেম ও ভালোবাসার জীবন আর সৌন্দর্যের পুষ্প বসন্ত।

এই মাটির বুকেই আমার ফুলের সৌরভ ও কোকিলের গানে ফাগুন অনন্ত।

এখন বসন্তকাল সদ্য ফুল ফুটেছে ভালোবাসার নব নব চেতনা গুণাগুণ।

আকাশে মেঘ হাসে চৈত্রের শন শন বাতাস মধুময় জীবনে কতো অন্বেষণ।

প্রকৃতির উদ্যানে দিওয়ানা নদী সাগর ও আকাশ বিদগ্ধ কান পেতে রয় আশা জীবন।

সুজন বন্ধু আমার কোথায় তুমি কতোদূরে প্রিয়তম ভালোবাসা সরল।

এসো এই ফাল্গুনে,ইছামতির বাঁকে বাঁকে ফুল কুড়াই রজনীগন্ধা টগর বকুল শেফালি।

এসো ভাটির সাঁঝে উড়ন্ত পাখির সাথে গান করি সুর তুলি জীবন উদাস-

দিন শেষে রাত্রি আসে আকাশে চাঁদ ওঠে জ্যোৎস্নায় বসন্ত প্রেম আলোর দর্শন।

পৃথিবীর কোলাহলে আমরা কখনো সদ্য নতুন,কখনো যুগল প্রচীন ও পুরাতন!

কখনো তরুণ কবি আমরা আঁধার ভেঙে হেঁটে যাই পথে পথে,মাঠে মাঠে,রাখল বাঁশির গতি।

কখনো সাম্যবন্টন আলোর চেতনায় কৃষাণ কৃষাণী আমরা কখনো বাউল সুরে উদয়।

কখনো নফসের আমিত্ব ও মৃগকামে দেহ পোড়াই ক্রোধের আগুনে জর্জর জ্বালায়।

আড়ালে দূর্নীতি সন্ত্রাস লুটেরা আর অত্যাচারীরা হাসে গরীবের অভাবে।

বড়াল তুরাগ গৌমতি ও মধুমতির তীরে ফুল ফোটে সৌরভ গৌরব।

তোমার ভালবাসার ধ্বনি ও প্রতিধ্বনি জীবনে প্রস্ফুটিত হয় বসন্ত উদ্যান।

পরাণে দারুণ ব্যথা,তাই বিচ্ছেদ বিরহে,দেহের অশ্রুঝরে যন্ত্রণার নয়ন।

এই পৃথিবীর বুকে প্রিয়তমার বাড়ি কতো প্রেম ভালোবাসা আর বসন্ত উৎসব ধ্বনি।

আজ ভালোবাসার দিন হয়তো দেখা হতে পারে বাস্তব কিংবা অতীন্দ্রিয় বাসনায়!

কোথায় প্রিয়তম,কোথায় প্রিয়তমা,আজ যে রঙিন ফাগুন চৈত্রের বসন্তকাল উদয়।

(Visited 11 times, 1 visits today)

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *